স্টারলিংক কী, খরচ কেমন আর বাংলাদেশে কবে আসছে?
আজকের পৃথিবী ইন্টারনেট ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। তবে শহরাঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট সহজলভ্য হলেও, প্রত্যন্ত অঞ্চল বা দুর্গম এলাকায় এখনও ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া এক চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যার সমাধান দিতেই এসেছে স্টারলিংক (Starlink) – এলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এর একটি বিপ্লবী স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা।
স্টারলিংক কী?
স্টারলিংক মূলত একটি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রকল্প, যার মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। স্পেসএক্স হাজার হাজার ছোট স্যাটেলাইট (Low Earth Orbit - LEO) কক্ষপথে স্থাপন করেছে, যেগুলো পৃথিবীর চারপাশ ঘুরে বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারনেট সিগন্যাল পাঠায়। এর প্রধান সুবিধা হচ্ছে— যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ফাইবার অপটিক পৌঁছায় না, সেখানেও স্টারলিংক ইন্টারনেট দিতে পারে।
স্টারলিংক-এর বৈশিষ্ট্য়ঃ
ব্রডব্যান্ড গতিঃ সাধারণত ৫০ থেকে ২৫০ Mbps পর্যন্ত ডাউনলোড স্পিড পাওয়া যায়। প্রিমিয়াম ব্যবহারকারীদের জন্য স্পিড আরও বেশি হতে পারে।
লো লেটেন্সিঃ গেমিং বা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মতো রিয়েল-টাইম কাজের জন্য উপযোগী।
সহজ ইনস্টলেশনঃ একটি ছোট ডিস অ্যান্টেনা, পাওয়ার কেবল এবং রাউটার দিয়েই সংযোগ স্থাপন সম্ভব।
মোবাইল ইউজঃ RV (Recreational Vehicle) সংস্করণ দিয়ে চলন্ত গাড়ি বা নৌকায়ও ব্যবহার করা সম্ভব।
খরচ কত?
বর্তমানে (২০২৫ সালের শুরু পর্যন্ত) যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে স্টারলিংক ব্যবহারের খরচ নিম্নরূপঃ
খরচের ধরণ | পরিমাণ (প্রায়) |
---|---|
ডিভাইস সেটআপ কিট | $599 |
মাসিক ফি | $120 |
রোড-ওয়্যার (RV) সংস্করণ | $150+ |
প্রিমিয়াম বা বিজনেস সংস্করণ | $500+ (মাসিক) |
বাংলাদেশে আসার পর খরচ কিছুটা কমবেশি হতে পারে, বিশেষ করে আমদানি শুল্ক ও ট্যাক্স বিবেচনায়। বাংলাদেশে স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। মে ২০২৫ থেকে গ্রাহক পর্যায়ে চালু হবে সবকিছু ঠিক থাকলে। এর আগে স্পেসএক্স ২০২৩ সালের শেষ দিকে জানিয়েছিল যে তারা বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে সেবা বিস্তারের পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) ইতিমধ্যে স্টারলিংক-এর কার্যক্রম নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে, এবং অনুমোদনের বিষয়টি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৫ সালের মে মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে স্টারলিংক চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল, উপকূলীয় এলাকা এবং চরাঞ্চলে।
স্টারলিংক কাদের জন্য উপযোগী?
দুর্গম বা ফাইবার-অবহেলিত অঞ্চলের জন্য
ফিল্ড অফিস বা রিমোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা বা ট্যুরিজম (যেমন: বাস, নৌকা)
দুর্যোগকালীন জরুরি সংযোগ ব্যবস্থা
স্টারলিংক শুধু ইন্টারনেট নয়— এটি একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এটি। বাংলাদেশে এর আগমন শুধু প্রযুক্তির উন্নয়ন নয়, বরং ডিজিটাল বৈষম্য ঘোচানোর দিকেও এক বিশাল পদক্ষেপ হতে পারে। আপনি যদি এমন এলাকায় থাকেন যেখানে ভালো ইন্টারনেট পাওয়া যায় না, তাহলে স্টারলিংক হতে পারে আপনার জন্য ভবিষ্যতের একমাত্র ভরসা।
সচারাচর জিজ্ঞাসাঃ
প্রশ্ন | উত্তর |
---|---|
স্টারলিংক ব্যবহার করতে ইন্টারনেট প্রোভাইডারের অনুমতি লাগবে কি? | না, তবে স্থানীয় সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। |
স্টারলিংক ব্যবহার করতে কি টাওয়ার বা ফাইবার লাগবে? | না, শুধু একটি ডিস অ্যান্টেনা ও রাউটারই যথেষ্ট। |
স্টারলিংক ডিভাইস কীভাবে অর্ডার করা যাবে? | চালু হওয়ার পর starlink.com থেকে সরাসরি অর্ডার করা যাবে। |
বৃষ্টি বা মেঘের সময় কি সংযোগে সমস্যা হয়? | কিছুটা গতি কমে যেতে পারে, তবে নেট বন্ধ হয় না। |
স্টারলিংক মোবাইলে ব্যবহার করা যাবে? | Wi-Fi রাউটারের মাধ্যমে মোবাইল ডিভাইসে ব্যবহার করা যাবে। |
গেম খেলার জন্য স্টারলিংক উপযোগী? | হ্যাঁ, বেশিরভাগ অনলাইন গেম খেলা সম্ভব, কিছু গেমে সামান্য লেটেন্সি হতে পারে। |