আমাদের চারপাশে পিঁপড়া দেখতে পাই। তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে খাবার পরিবহন করে, জীবন যাপন করে। তাদের শরীরের ওজনের তুলনায় তারা যে খাদ্য কণা পরিবহন করে সেটা অনেক বেশি। দেখে মনে হয় যেন তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু তারা কখনোই ক্লান্ত হয়ে পড়ে না। তারা কঠোর পরিশ্রম করে দিন যাপন করে। কোন কাজ করতে ব্যর্থ হলে তা আবার করার চেষ্টা করে। যেমন মাকড়সার রবার্ট ব্রুষের গল্পে।

পিঁপড়েরা পথ হারায় না, কারণ তারা তাদের চারপাশের পরিবেশ ও রাস্তা চেনার জন্য অত্যন্ত দক্ষ প্রাকৃতিক কৌশল ব্যবহার করে। এই ছোট প্রাণীগুলোর মস্তিষ্ক খুব ছোট হলেও, তাদের সামাজিক আচরণ ও পথ চিনে রাখার ক্ষমতা অত্যন্ত উন্নত। পিঁপড়েরা রাস্তা মনে রাখে ফেরোমন নামক রাসায়নিক পদার্থের সাহায্যে। তারা চলার পথে মাটিতে একটি নির্দিষ্ট গন্ধযুক্ত রাসায়নিক পদার্থ ছেড়ে যায় যাকে ফেরোমন বলা হয়। অন্য পিঁপড়েরা এই গন্ধ অনুসরণ করে একই পথে চলে, ফলে পথটি একটি সুগঠিত রাস্তা হিসেবে গড়ে ওঠে। ফেরোমনের ঘনত্ব বেশি হলে সেই পথ ধরে চলার প্রবণতা আরও বেড়ে যায়, ফলে অনেক পিঁপড়ে একসাথে চললে রাস্তাটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আরো পড়ুনঃ ডেটল তৈরি হয় যেভাবেএছাড়াও পিঁপড়েরা সূর্যের আলো, ভূখণ্ডের বৈশিষ্ট্য এবং এমনকি পদচিহ্নের মতো ক্ষুদ্র ভৌতিক ইঙ্গিতও ব্যবহার করে দিক নির্ধারণ করতে পারে। মরুভূমিতে বসবাসকারী কিছু প্রজাতির পিঁপড়ে সূর্যের অবস্থান দেখে এবং চলার পথে গুনে গুনে রাখা পদক্ষেপের মাধ্যমে নিজেদের স্থান নির্ধারণ করে, যাকে ‘পথ সংহতি’ বা path integration বলে। তাদের compound eye বা যৌগিক চোখ অনেক বেশি আলো ও দিক নির্দেশনা ধরতে সক্ষম, যা তাদের আশপাশ বুঝতে সাহায্য করে। এমনকি কোনো পিঁপড়ে ভুলবশত ভুল পথে চলে গেলেও সে আবার আগের ফেরোমন চিহ্ন খুঁজে নিয়ে সঠিক পথে ফিরে আসে। সামাজিকভাবে কাজ করা এই প্রাণীরা তথ্য বিনিময় করে এবং একে অপরের গতিপথ দেখে সিদ্ধান্ত নেয় কোন পথে যাবে। এই সব মিলিয়েই পিঁপড়েরা খুব দক্ষতার সাথে নিজেদের রাস্তা মনে রাখে এবং হারায় না।
দিনশেষে তারা খাবার জোগাড় করে তাদের গুহায় চলে যায়। এমন অধ্যবসায় প্রাণী যারা কিনা নিজেদের খাদ্য নিজেরাই জোগাড় করে এমন বাস্তব উদাহরণ মানুষকে উজ্জীবিত করে।