বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন মহাবিশ্বের সব বল (forces) ও কণাগুলিকে একটি একীভূত তত্ত্বের মধ্যে সংযুক্ত করতে। এই তত্ত্বকেই বলা হয় “Theory of Everything” বা “সর্বব্যাপী তত্ত্ব”। সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের আল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বিজ্ঞানী একটি যুগান্তকারী তত্ত্ব উত্থাপন করেছেন, যা আমাদের সেই অভীষ্ট লক্ষ্যের এক ধাপ কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে।
গবেষক মিক্কো পার্টানেন এবং জুক্কা তুল্ককি এমন একটি তাত্ত্বিক কাঠামো উপস্থাপন করেছেন যেখানে মহাকর্ষকে গেজ তত্ত্ব (gauge theory) হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। গেজ তত্ত্ব মূলত কোয়ান্টাম বলগুলিকে ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয়, যেমন ইলেকট্রোম্যাগনেটিক বা দুর্বল নিউক্লিয়ার বল। সাধারণত মহাকর্ষকে আপেক্ষিক তত্ত্ব (General Relativity) দ্বারা বোঝানো হয়, যা কোয়ান্টাম বলের থেকে ভিন্ন। কিন্তু এই নতুন গবেষণায় মহাকর্ষকেও একটি কোয়ান্টাম গেজ বলের মতো দেখা হয়েছে। তারা আট-মাত্রিক একটি গাণিতিক কাঠামোর ব্যবহার করেছেন, যেখানে অতিরিক্ত মাত্রাগুলোর মাধ্যমে মহাকর্ষীয় বলকে কণার ঘূর্ণন (spin) ও গতি অনুযায়ী প্রকাশ করা যায়।
এটি স্পিনর নামক গাণিতিক বস্তু ব্যবহার করে তৈরি, যা কণার স্পিন ও অবস্থা নির্ধারণে সক্ষম। গবেষকদ্বয়ের মতে, শুধু ভর নয় বরং শক্তিও মহাকর্ষের ক্ষেত্র সৃষ্টি করে—এমন ধারণা এই তত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই তত্ত্বের মাধ্যমে ব্ল্যাক হোলের সিঙ্গুলারিটি বা বিগ ব্যাং-এর সূচনাকালীন অবস্থা বোঝার ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি হতে পারে। এটি এমন এক সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয় যেখানে কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও আপেক্ষিকতা তত্ত্ব একীভূত হয়ে মহাবিশ্বের বাস্তবতাকে পূর্ণাঙ্গভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হবে। যদিও এই তত্ত্ব এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে পৌঁছায়নি, তবে এটি কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটির ক্ষেত্রে এক বড় মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে। ভবিষ্যতে, এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা আরও গবেষণা চালিয়ে যেতে পারবেন এবং হয়তো একদিন “Theory of Everything” বাস্তবে রূপ নিতে পারে।