জমিতে DDT – পাউডার এখন আর ব্যবহার হয়না কেন?

Date:

শেয়ারঃ

ডিডিটি (DDT: Dichloro-Diphenyl-Trichloroethane) একসময় একটি কার্যকর কীটনাশক হিসেবে কৃষি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হত। তবে বর্তমানে অনেক দেশে এটি নিষিদ্ধ। ডিডিটি-এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে এজন্য ডিডিটি একটি স্থায়ী জৈব দূষক (Persistent Organic Pollutant – POP) হিসেবে পরিচিত। এটি জমি, পানি এবং জীববৈচিত্র্যের মধ্যে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে। এর ফলে, মাটি এবং পানি দূষিত হয় এবং জীববৈচিত্র্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।



(ads)

পরিবেশে জৈবপূর্ণ বিস্তার (Bioaccumulation) ঘটে। ডিডিটি পরিবেশে সহজে ভাঙে না এবং খাদ্যশৃঙ্খলে সঞ্চিত হয়। উদাহরণস্বরূপঃ


ডিডিটি ক্ষুদ্র প্রাণীদের শরীরে প্রবেশ করে। তা খাদ্য শৃঙ্খলে ক্রমান্বয়ে বড় প্রাণীর শরীরে বেশি পরিমাণে জমা হয়, বিশেষত শিকারী প্রাণীদের। মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ডিডিটি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এর সম্ভাব্য প্রভাবঃ


১. ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি।

২. স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি।

৩. প্রজনন সমস্যার সৃষ্টি।

৪. শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা।{alertWarning}


পোকামাকড়ের প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি (Resistance Development) হয়। ডিডিটি ব্যবহারের ফলে পোকামাকড়ের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা (Resistance) তৈরি হয়। ফলে এটি কার্যকর কীটনাশক হিসেবে আর তেমন কার্যকর নয়। ডিডিটি-এর ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা তৈরি হয়। ২০০১ সালের স্টকহোম কনভেনশন অন পারসিস্টেন্ট অর্গানিক পলুট্যান্টস চুক্তির মাধ্যমে ডিডিটি নিষিদ্ধ করা হয়, যদিও নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে (যেমন ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ) সীমিত ব্যবহার অনুমোদিত ছিল। অধিকাংশ দেশ ডিডিটি ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে পরিবেশবান্ধব কীটনাশক এবং জৈবিক পদ্ধতিতে পোকামাকড় দমন করা হয়। যেমনঃ


জৈব কীটনাশক (বায়োপেস্টিসাইড)। প্রাকৃতিক শত্রু ব্যবহার (যেমন পোকামাকড়ভক্ষী প্রাণী)। সমন্বিত কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা। (Integrated Pest Management – IPM) ডিডিটি একসময় কৃষিক্ষেত্রে উপকারী হলেও এর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে এটি বর্তমানে নিষিদ্ধ। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এর বিকল্প পদ্ধতিগুলোর দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে।


রাসায়নিক গঠন


সম্ভবত ডিডিটি থেকে সবচেয়ে বড় বিপদ হল যে খামার এলাকায় এর ব্যাপক ব্যবহার প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে বিপর্যস্ত করতে পারে, শুধুমাত্র প্রচুর পরিমাণে উপকারী পোকামাকড়কে হত্যা করে না বরং মাছ, পাখি এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মৃত্যু ঘটায়। তাদের খাওয়ানো পোকামাকড় ডিডিটি দ্বারা মারা যায় বা সরাসরি বিষ খেয়ে থাকে। উল্লেখ্য, ডাইক্লোরোডিফেনাইলট্রিক্লোরোইথেন , সাধারণত ডিডিটি নামে পরিচিত , এটি একটি বর্ণহীন, স্বাদহীন এবং প্রায় গন্ধহীন স্ফটিক রাসায়নিক যৌগ, একটি অর্গানোক্লোরাইড । মূলত একটি কীটনাশক হিসাবে বিকশিত , এটি পরিবেশগত প্রভাবের জন্য কুখ্যাত হয়ে ওঠে । 1874 সালে অস্ট্রিয়ান রসায়নবিদ Othmar Zeidler দ্বারা DDT প্রথম সংশ্লেষিত হয় । ডিডিটির কীটনাশক ক্রিয়াটি 1939 সালে সুইস রসায়নবিদ পল হারম্যান মুলার আবিষ্কার করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বিতীয়ার্ধে বেসামরিক এবং সৈন্যদের মধ্যে পোকামাকড়-বাহিত রোগ ম্যালেরিয়া এবং টাইফাসের বিস্তার সীমিত করার জন্য ডিডিটি ব্যবহার করা হয়েছিল।


আংশিক সংগৃহীতঃ উইকিপিডিয়া

mehrab360
mehrab360https://www.mehrab360.com
হোসাইন হাওলাদার, mehrab360.com এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য, বিশ্লেষণ ও হালনাগাদ কনটেন্ট নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে। বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে জটিল প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো সহজভাবে তুলে ধরা। বিশ্বের প্রযুক্তি জগতের সর্বশেষ আপডেট, রিভিউ ও ব্যাখ্যামূলক কনটেন্ট পড়তে পারবেন। Email: info@mehrab360.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

এই সম্পর্কে আরো পড়ুন

পাকা ফলে এস্টার থাকে কেন?

আমরা প্রায় সবাই এস্টার সম্পর্কে জানি। কেউ হয়তো বা জানি না। এস্টার হলো জৈব যৌগের (-COOR') মূলকের উপস্থিতি।...

প্রায় সব প্রাণী কেন অক্সিজেন গ্রহণ করে?

পৃথিবীর প্রায় সব প্রাণীই বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন গ্রহণ করে। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে—কেন অক্সিজেন? এতসব গ্যাসের ভেতরে...

সোডিয়াম মৌলের অজানা তথ্য

সোডিয়াম (Na) – এটি একটি পরিচিত নাম, বিশেষত আমরা যখন টেবিল লবণের কথা বলি। তবে এই মৌলটির পরিচিতির...

জৈব যৌগ ৪ পর্ব – এইচএসসি প্রস্তুতি

অ্যালকিনসাধারণ সংকেতঃঅ্যালকিনের সাধারণ সংকেত CnH2n এরা অসম্পৃক্ত যৌগ এবং পাশাপাশি দুটি কার্বনের মাঝে সাধারণত একটি বন্ধন থাকে।অ্যালকিনের সাধারণ...