প্রায় সব প্রাণী কেন অক্সিজেন গ্রহণ করে?

Date:

শেয়ারঃ

পৃথিবীর প্রায় সব প্রাণীই বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন গ্রহণ করে। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে—কেন অক্সিজেন? এতসব গ্যাসের ভেতরে কেবলমাত্র অক্সিজেনকেই কেন জীবন বেছে নিয়েছে? পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৭৮% নাইট্রোজেন ধারণ করে, তাহলে কেন বেশিরভাগ জীব অক্সিজেন শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করে?

জীবের কোষের অভ্যন্তরে শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি হয় মাইটোকন্ড্রিয়াতে। এই প্রক্রিয়াকে বলে কোষীয় শ্বসন (cellular respiration)। এখানে গ্লুকোজ ভেঙে শক্তি উৎপন্ন করা হয়, যার মূল চালিকাশক্তি অক্সিজেন। কারণ, অক্সিজেন খুবই প্রতিক্রিয়াশীল এবং এটি অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে শক্তি উৎপন্নকারী বিক্রিয়ায় অংশ নেয় দ্রুত ও কার্যকরভাবে।

মানুষ সহ জীব, যারা অন্যান্য জৈব পদার্থ গ্রহণ করে তাদের পুষ্টি এবং শক্তি পায়। প্রাথমিক পৃথিবীতে অক্সিজেনের পরিমাণ ছিল অতি সামান্য। প্রায় ২.৪ বিলিয়ন বছর আগে প্রথমবারের মতো অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে যায়, যাকে বলা হয় “The Great Oxidation Event”। এর মূল কারণ ছিল সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামক অতি প্রাচীন জীব, যারা প্রথমবারের মতো ফটোসিন্থেসিসের মাধ্যমে অক্সিজেন তৈরি করে।

এই অতিরিক্ত অক্সিজেন তখন পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং অক্সিজেননির্ভর জীবের বিকাশ শুরু হয়। অক্সিজেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি শক্তি উৎপাদনে খুব দক্ষ। উদাহরণস্বরূপ, অক্সিজেন-ভিত্তিক কোষীয় শ্বসনে এক মল গ্লুকোজ থেকে ৩৬টি ATP (শক্তি একক) উৎপন্ন হয়, যেখানে অক্সিজেন ছাড়া অনৈষধিক শ্বসনে (anaerobic respiration) হয় মাত্র ২টি ATP। মাইটোকন্ড্রিয়ার ঝিল্লিতে এক এনজাইম থেকে অন্য এনজাইমে প্রেরণ করা হয়, যা একটি ছোট স্রোত তৈরি করে যা এই বাধা পেরিয়ে প্রোটনগুলোকে পাম্প করে। এবং এর উচ্চ তড়িৎ ঋণাত্মকতার কারণে, অক্সিজেন সাধারণত এই ইলেকট্রন পরিবহন শৃঙ্খলে চূড়ান্ত স্টেশন হিসেবে কাজ করে , ইলেকট্রন গ্রহণ করে এবং দুটি প্রোটন তুলে পানি তৈরি করে।

অন্য গ্যাস যেমন সালফার বা নাইট্রেট ব্যবহার করে শ্বসন সম্ভব হলেও, তাতে শক্তি উৎপাদনের হার অনেক কম এবং সেইসাথে অনেক ক্ষতিকর উপজাত তৈরি হয়। উচ্চমাত্রার শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা থাকার কারণে, অক্সিজেনভিত্তিক প্রাণীরা আরও জটিল এবং বৃহৎ শরীর গঠন করতে সক্ষম হয়েছে। এটি প্রাণীর বুদ্ধি, গঠন এবং গতি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। মানুষের মতো জটিল প্রাণীর বিকাশ সম্ভব হয়েছে অনেকাংশেই অক্সিজেননির্ভর শক্তি ব্যবস্থার কারণে।যদিও অক্সিজেন জীবনদায়ী, তবুও এটি সম্পূর্ণ নিরীহ নয়। এটি অতি সক্রিয় হওয়ায় কোষের উপাদান নষ্ট করতে পারে, যাকে বলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস। এই কারণে জীবের দেহে নানা রকম প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, যেমন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইম। অক্সিজেনের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য, শক্তি উৎপাদনে দক্ষতা এবং পরিবেশে সহজলভ্যতার কারণে প্রায় সব প্রাণী এটি গ্রহণ করে থাকে। যদিও এটি জীবনদায়ী, তবুও এর ব্যবহারে ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। তাই অক্সিজেনকে বলা যায়, একসঙ্গে জীবনদাতা এবং নিয়ন্ত্রক শক্তি।

mehrab360
mehrab360https://www.mehrab360.com
হোসাইন হাওলাদার, mehrab360.com এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য, বিশ্লেষণ ও হালনাগাদ কনটেন্ট নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে। বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে জটিল প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো সহজভাবে তুলে ধরা। বিশ্বের প্রযুক্তি জগতের সর্বশেষ আপডেট, রিভিউ ও ব্যাখ্যামূলক কনটেন্ট পড়তে পারবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিজ্ঞাপনspot_img

এই সম্পর্কে আরো পড়ুন

পরমাণু কোথা থেকে আসে?

পরমাণু কোথা থেকে এসেছে তা বোঝার জন্য আমাদের কিছুটা প্রশ্ন জানতে হবে। আমাদের চারপাশে অনেক জিনিসই দেখতে পাই।...

ইলেকট্রোফাইল জৈব বিক্রিয়ার চালিকাশক্তি

ইলেকট্রোফাইল শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ইলেকট্রনের প্রতি আকর্ষণ বা ইলেকট্রোফিলিসিটি থেকে। এটি এমন একটি অণু বা কার্যকরী মূলক, যেটি...

পরমানুর নিউক্লিয়াস কেন গোলাকার হয় না?

বইতে প্রায় আমরা দেখি পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে গোলাকার হিসাবে চিত্রিত করা হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে তারা খুব কমই...

পাকা ফলে এস্টার থাকে কেন?

আমরা প্রায় সবাই এস্টার সম্পর্কে জানি। কেউ হয়তো বা জানি না। এস্টার হলো জৈব যৌগের (-COOR') মূলকের উপস্থিতি।...