আপনার বাসায় যদি পোষা বিড়াল থাকে আর হঠাৎ একদিন দেখলেন সে বসে কিছু যেন গুনছে, তাহলে অবাক হবেন না। এমন কাণ্ড হ্যারি পটারের জাদুর জগতে কল্পনা করা যায়, তবে বাস্তবেও কি প্রাণীরা গুনতে পারে? অনেকের কাছেই এটা অবিশ্বাস্য শোনালেও, প্রকৃতিতে বহু প্রাণীর মধ্যে সংখ্যাজ্ঞান বা সংখ্যা বুঝতে পারার সক্ষমতা দেখা যায়। বিজ্ঞানীদের মতে, কিছু প্রাণী যেমন পোকা, শামুক, টিকটিকি, বিড়াল, পাখি এমনকি অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীও সংখ্যার পার্থক্য ধরতে সক্ষম।

এদের এই দক্ষতা মূলত তাদের পরিবেশে টিকে থাকার জন্য উপকারী, যেমন খাবার খোঁজা বা বংশবিস্তারে সহায়তা করে। প্রাণীদের মস্তিষ্কে থাকা ‘নাম্বার নিউরন’ নামক বিশেষ স্নায়ুকোষ নির্দিষ্ট সংখ্যার প্রতিক্রিয়া দেয়। এমনকি সদ্য ফোটা মুরগির ছানার মধ্যেও এই কোষের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা থেকে ধারণা করা হয় এ ক্ষমতা জন্মগত। প্রকৃতিতে এ ধরনের বহু নজির রয়েছে—মৌমাছিরা ফুলের রাস্তা মনে রাখে বিভিন্ন চিহ্ন গুনে, মাকড়সা গোনে কত শিকার জালে ধরা পড়েছে, এমনকি কিছু ব্যাঙ প্রজননের সময় একে অন্যের সঙ্গে ‘চাক’ শব্দের প্রতিযোগিতা করে, যেটাকে বলে সংখ্যাভিত্তিক দ্বন্দ্ব।
সিংহেরা শত্রুপক্ষের গর্জনের সংখ্যা শুনে যুদ্ধের আগে তাদের শক্তি বিচার করে। ২০২৪ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে, কাক নির্দিষ্ট কিছু দেখে বা শুনে এক থেকে চার পর্যন্ত গুনে সেই অনুযায়ী ডাক দিতে পারে। তবে প্রাণীদের এই সংখ্যাবোধ মানুষের গণনার মতো নয়। এটি একটি আনুমানিক ধারণাভিত্তিক প্রক্রিয়া, যাকে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘অ্যাপ্রোক্সিমেট নাম্বার সিস্টেম’ বা ANS। এটি মূলত তুলনা করার সহজাত দক্ষতা। যেমন দুটি সংখ্যার মধ্যে দূরত্ব যত বেশি, পার্থক্য ধরা তত সহজ, আবার বড় দুটি সংখ্যার চেয়ে ছোট দুটি সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য করা তুলনামূলকভাবে সহজ। কিছু প্রজাতিকে আবার সাধারণ যোগ-বিয়োগ শেখানোও সম্ভব হয়েছে।
যেমন আফ্রিকান গ্রে প্যারট, মৌমাছি, স্টিংরে মাছ বা পায়রা প্রতীকের মাধ্যমে নির্দিষ্ট নিয়ম শিখে সহজ গাণিতিক প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রাণীদের দিয়ে গুণ বা ভাগের মতো কাজও করানো সম্ভব হতে পারে। যদিও জটিল গণিত বা অ্যালজেব্রা বোঝার মতো ক্ষমতা তাদের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব নয় বলেই মনে করা হয়। তারপরও প্রাণীদের এই প্রাকৃতিক গাণিতিক দক্ষতা সংখ্যার রহস্যময় জগতে এক চমৎকার ঝলক মাত্র।
নামিবিয়ার হিম্বা উপজাতির মতো কিছু গোষ্ঠী এখনো পরিমাণ বোঝার জন্য আনুমানিক সংখ্যা পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল। কৃষিকাজ ও পশুপালনের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আরও নিখুঁত হিসাবের প্রয়োজন হয়, আর তা থেকেই সম্ভবত আজকের প্রচলিত পাটিগণিতের জন্ম।