গভীর রাতে কুকুর ডাকে কেন? বিজ্ঞান কী বলে?

Date:

শেয়ারঃ

কুকুরের গভীর রাতে ডাকা বা কান্নার মতো শব্দ করা একটি বহুল পরিচিত ঘটনা। এই বিষয়টি অনেকের মধ্যেই কৌতূহল জাগিয়ে তোলে। এটি নিয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে, পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মেও এই বিষয়ে নানা কুসংস্কার ও বিশ্বাস প্রচলিত। গভীর রাতে কুকুর কেন ডাকে, তা জানার জন্য আমাদের তাদের আচরণ, পরিবেশ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো বুঝতে হবে।

এআই দিয়ে নির্মিত

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাঃ

কুকুরের ডাক তাদের মধ্যে যোগাযোগের একটি স্বাভাবিক পদ্ধতি। গভীর রাতে যখন চারপাশ নিরব থাকে, তখন তাদের ডাক আরও স্পষ্টভাবে শোনা যায়। বিশেষত বুনো পরিবেশে বসবাসকারী কুকুরেরা নিজেদের দলকে সংকেত দিতে বা এলাকা সম্পর্কে সতর্ক করতে এই ডাকে সাড়া দেয়।


কুকুরের শ্রবণশক্তি এবং ঘ্রাণশক্তি মানুষের তুলনায় অনেক গুণ বেশি। রাতে যখন পরিবেশ নিস্তব্ধ থাকে, তখন বিভিন্ন দূরের শব্দ বা গন্ধ তাদের ইন্দ্রিয়কে উদ্দীপ্ত করতে পারে। এটি তাদের ডাকার কারণ হতে পারে যদি কোনো কুকুর ব্যথা পায়, অসুস্থ হয়, বা মানসিকভাবে অস্বস্তি বোধ করে, তবে এটি তাদের চিৎকার বা কান্নার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এভাবে তারা সাহায্যের জন্য মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। কুকুরের মধ্যে তাদের এলাকা রক্ষার প্রবণতা থাকে। যদি কোনো অচেনা কুকুর বা প্রাণী তাদের এলাকায় প্রবেশ করে, তবে তারা সেটি সতর্ক করার জন্য ডাকে।


ধর্মীয় ব্যাখ্যা


১. ইসলামী দৃষ্টিকোণঃ

ইসলামে রাতে কুকুরের ডাক শোনা গেলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এটি দোষ বা গুনাহের কোনো কারণ নয়, বরং একটি সতর্কবার্তা হিসেবে ধরা হয়।


২. অশরীরী আত্মার উপস্থিতিঃ

অনেক সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করা হয় যে, কুকুর অতিপ্রাকৃত সত্তার উপস্থিতি অনুভব করতে পারে। তারা সেই কারণে গভীর রাতে ডাকে। বিশেষত এশিয়ার অনেক দেশে কুকুরের রাতের ডাককে অশুভ সংকেত হিসেবে দেখা হয়।


৩. পৌরাণিক বিশ্বাসঃ

বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনিতে কুকুরকে আত্মার প্রহরী বা দূত হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। রাতে তাদের ডাককে সেই দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে দেখা হয়।


বিবর্তন ও প্রাকৃতিক প্রবৃত্তিঃ


গভীর রাতে কুকুর ডাকার প্রবণতা তাদের বুনো পূর্বপুরুষ নেকড়ের কাছ থেকে পাওয়া একটি বৈশিষ্ট্য। নেকড়েরা তাদের সঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে বা শিকারের অবস্থান জানাতে চিৎকার করে। কুকুরের ক্ষেত্রেও এটি একটি অবশিষ্ট বৈশিষ্ট্য হিসেবে থেকে গেছে।


কুকুরের গভীর রাতে ডাকা একটি সাধারণ এবং প্রাকৃতিক বিষয়। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে তাদের আচরণের অংশ, তবে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এটি নিয়ে নানা ধরনের ব্যাখ্যা রয়েছে। আমাদের উচিত বিষয়টি বাস্তবসম্মতভাবে দেখা এবং কুসংস্কার পরিহার করা।

mehrab360
mehrab360https://www.mehrab360.com
হোসাইন হাওলাদার, mehrab360.com এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য, বিশ্লেষণ ও হালনাগাদ কনটেন্ট নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে। বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে জটিল প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো সহজভাবে তুলে ধরা। বিশ্বের প্রযুক্তি জগতের সর্বশেষ আপডেট, রিভিউ ও ব্যাখ্যামূলক কনটেন্ট পড়তে পারবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিজ্ঞাপনspot_img

এই সম্পর্কে আরো পড়ুন

অগ্নিশিখার রহস্যঃ অক্সিজেনের আবিষ্কার

আমরা যে প্রতি মুহূর্তে শ্বাস নিই, সেই বাতাসটা আসলে কী দিয়ে তৈরি? আবার ধরুন, মোমবাতি বা চুলার আগুন...

পানামা খাল কেন তৈরি করা হয়েছিল?

ধরুন আপনি একজন নাবিক, বিশাল সমুদ্রযাত্রায় বের হয়েছেন। পাড়ি দিতে হবে আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগর। কিন্তু সামনে এক...

গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রাণীরা এত রঙিন কেন?

গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের বনজঙ্গল, নদী ও সমুদ্রের পানির নিচে থাকা প্রাণীগুলোকে দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। এদের শরীরজুড়ে থাকে লাল,...

মস্তিষ্কের কোষ কোন বয়সে বাড়ে?

বিকাশিত মানুষের মস্তিষ্ক যখন গর্ভে তখন কোটি কোটি নিউরন অর্জন করে এবং শৈশবে আরও কিছু নিউরনকে কাজে লাগায়।...