অভিনব কৌশলে মাখন তৈরি!

Date:

শেয়ারঃ

গরুর দুধ হলো একটি কলয়েড। এতে ৩.৯% ফ্যাট বা চর্বি ও ৩.২% প্রোটিন কণা থাকে। এ চর্বি রা ফ্যাটকো দুধ থেকে পৃথক করলে ক্রীম পাওয়া যায়। কাঁচা দুধের মধ্যস্থ সাসপেনশনে থাকা চর্বির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাসমূহের কোয়াগুলেশন বা জমাটবদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় ক্রীম তৈরি করা হয়। ক্রীমকে পরিশোধনে মাখন পাওয়া যায়। দুধ থেকে মাখন তৈরি নিম্নোক্ত ধাপে করা হয়। 


(toc) #title=(বিষয়বস্তু সারণি)




উপাদান: (১) গরুর দুধ (২) লবণ


(১) দুধের শীতলীকরণঃ কাঁচা দুধকে পরিষ্কার পাত্রে নিয়ে কমপক্ষে একদিন কিনে রেফ্রিজেরেটরে রেখে ঠাণ্ডা করা হয়। তখন দুধের ওপর অংশে ক্রীম বা দুধের সর বা ছানা ভেসে ওঠে। হাতা বা dipper এর সাহায্যে ক্রীমগুলো আলাদা করে রাখা হয়।


(২) দুধের মন্থন বা কোয়াগুলেশনঃ এ দুধকে হস্তচালিত ক্রীম মেশিন অথবা বিদ্যুৎ চালিত ক্রীম লিট মেশিন অথবা ব্লেন্ডার মেশিন দ্বারা আলোড়িত করে সাসপেনশনে থাকা সমস্ত চর্বি কণাকে কোয়াগুলেশন বা জমাটবদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার ঢেলায় রূপ দেয়া হয়। মেশিনের ধাক্কা খেয়ে কিছু ঢেলা নিচে যায় এবং অধিকাংশ ঢেলা পানির ওপরে ভাসমান অবস্থায় থাকে। ভাসমান ঢেলাগুলোকে হাতা দ্বারা আলাদা করে নেয়া হয়। জলীয় অংশ বা ঘোল পৃথক হয়ে বের হয়ে পড়ে। সমস্ত ক্রীমের ঢেলাগুলোকে একটি গামলায় নিয়ে গোলাকার ঢেলা তৈরি করে বার বার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়।


দুধকে ক্রীম মেসিন দিয়ে সেন্ট্রিফিউগল বা কেন্দ্রবিমুখী চক্রাকারে আলোড়িত করে দুধের সমস্ত চর্বি কণাকে ক্রীম রূপে দুধের জলীয় অংশ বা ঘোল থেকে পৃথক করার প্রক্রিয়াকে দুধের মন্থন বলে। ঘোলের মধ্যে ল্যাক্ট এলবুমিন ও ল্যাকটোগ্লোবুলিন অর্থাৎ হোয়ে-প্রোটিন থাকে।


(৩) ক্রীমের প্রসেসিংঃ একটি স্টিলের পাত্রে ঐ ক্রীম নিয়ে ৬০°-৭০° সেলসিয়াস এর মধ্যে ৩০ মিনিট উত্তপ্ত করা হয়। এর চেয়ে তাপমাত্রা বেশি হলে উৎপন্ন মাখনের স্বাদ নষ্ট হয়। উত্তপ্ত করার সময় ক্রীমকে অনবরত একটি কাঠি দিয়ে বাড়তে হয় যেন ক্রীমের নিচের ও ওপরের অংশ সমভাবে উত্তপ্ত হয়। এর ফলে ক্রীমের অতিরিক্ত পানি ও বাতাস দূর হয় এবং ক্রীম পাণ্ডুরিত অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়া মুক্ত হয়।


(৪) দুধের পাস্তুরিত ক্রীমকে ১০-১২ ঘণ্টা যাবৎ ফ্রিজে ৫°-১০°C তাপমাত্রার মধ্যে রাখা হয়। তখন ক্রীমের চর্বি আকস্মিকভাবে ছোট ছোট দানা বা বাটার কণা বা বাটার-চর্বি কেলাস গঠন করে।


(৫) মাখন মন্থনঃ (Butterchurn) এজিং করা ক্রীমকে উপযুক্ত তাপমাত্রা যেমন ৯°-১১°C-এ রেখে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে আলোড়িত করে বাটার-চর্বি কেলাসগুলোকে সম্পূর্ণভাবে একত্রিত করার প্রক্রিয়াকে বাটার চার্নিং বা মাখন মন্থন বলে। এ প্রক্রিয়ায় ক্রীমের কিছু পানি ও বাতাস দূর হয়।


(getCard) #type=(post) #title=(আপনার দরকার হতে পারে)


মাখন মন্থন প্রক্রিয়ার বর্ণনাঃ বাটার চার্নিং মেশিনের ৪০-৫০% অংশ এজিং করা ক্রীম দ্বারা পূর্ণ করা হয়। মেশিনের ভেতরের ক্রীমকে কেন্দ্রমুখী আলোড়নের জন্য মেশিনকে প্রথম ৫ মিনিট প্রতি মিনিটে ২৫-৩৫ বার হারে ঘুরানো হয়। এরূপ ঘূর্ণনের ফলে চর্বিকণার চারদিকে থাকা লিপোপ্রোটিনের আবরণটি ভেঙ্গে যায়। এ আবরণটি চর্বি কণাগুলোকে পরস্পর থেকে দূরে রাখে। এ আবরণটি ভাঙ্গনের ফলে চর্বিকণাগুলো সংবদ্ধ হয়ে বড় আকারের বাটার কণা (butter grains) সৃষ্টি বেলা করে। এ সময় বাতাসের ফেনা ও বাষ্পের বুদবুদ তৈরি হয়। মেশিন বন্ধ করে উৎপন্ন গ্যাস ও বাষ্প বের করা হয়। এরপর একই হারে ২০-৩০ মিনিট মেশিন ঘুরানো হয়। বাটার মন্থনে ক্রীম থেকে বের হওয়া ঘোল বা বাটার মিল্ককে মেশিন কাত করে ঢেলে নেয়া হয়।


(৬) যে পরিমাণ বাটার-মিল্ক বের হয়েছে, সে পরিমাণ বরফ শীতল পানি মেশিনের যোগ করে ৫ মিনিট যাবত প্রতি মিনিটে ১০ থেকে ১৫ বার হারে মেশিন ঘোরানো হয়। এরপরে মিল্ক যুক্ত মাখন পাওয়া যায়। উৎপন্ন মাখনে কিছু পরিমান লবণ মিশালে স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়। 


(৭) রেফ্রিজারেশনঃ মোড়কে আবদ্ধ মাখনকে সুবিধামাত্র পাত্রে ঢেলে ১০° সেলসিয়াসে নিচে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়।

(full-width)

mehrab360
mehrab360https://www.mehrab360.com
হোসাইন হাওলাদার, mehrab360.com এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য, বিশ্লেষণ ও হালনাগাদ কনটেন্ট নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে। বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে জটিল প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো সহজভাবে তুলে ধরা। বিশ্বের প্রযুক্তি জগতের সর্বশেষ আপডেট, রিভিউ ও ব্যাখ্যামূলক কনটেন্ট পড়তে পারবেন। Email: info@mehrab360.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

এই সম্পর্কে আরো পড়ুন

মানুষের দুটি ছায়া কখন দেখা যায়?

প্রাচীনকালের মানুষ কত কিছুই না মনে করতো। তাদের ধারণা ছিল সব ভিত্তিহীন। আধুনিক যুগে মানুষ এইসব ভিত্তিহীন কুসংস্কার...

চোখের পাতা কাঁপে কেন?

চোখের পাতা কাঁপা বা eyelid twitching একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা, যা প্রায় প্রত্যেকেই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে...

রাণী মৌমাছির কাজ কি?

মৌমাছি Arthropoda পর্বের Insecta শ্রেণির Hymenoptera বর্গের Apidae গোত্রের Apis গণের। বাংলাদেশে তিন প্রজাতির মৌমাছি পাওয়া যায়- Apis indica...

ছায়া কি কখনো রঙিন হতে পারে?

ছোটবেলায় সবাই হয়তো খেয়াল করেছি, রোদে দাঁড়ালে পেছনে একটা কালো ছায়া পড়ে। তখন ভাবতাম, ছায়া মানেই অন্ধকার, ছায়া...