কৃত্রিম রক্ত আবিষ্কার করেছে বিজ্ঞানীরা

Date:

শেয়ারঃ

আমাদের অনেকেরই রক্ত দিতে ভয় লাগে। এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট গ্রুপের ডোনার পাওয়া যায় না। এই সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞানীরা কৃত্রিমভাবে রক্ত তৈরি করেছেন। বিজ্ঞানীরা মূলত কৃত্রিমভাবে লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি করতে পেরেছেন। প্রাকৃতিক রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার মতোই এই রক্ত কণিকা অক্সিজেন পরিবহন করতে সক্ষম। তবে বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে এই রক্তকণিকাকে আরও উন্নত করেছেন। ফলে এগুলো অক্সিজেন পরিবহনের পাশাপাশি ঔষধ সরবরাহ, রোগজীবাণু শনাক্তকরণ এবং বিষক্রিয়া প্রতিরোধেও সক্ষমতা লাভ করেছে।


কৃত্রিম রক্ত আবিষ্কার অনেক ধরনের সমস্যার সমাধান হয়েছে!



টিস্যু কালচার প্রযুক্তিতে যেমন স্টেম কোষ ব্যবহার করে একটি পূর্ণাঙ্গ উদ্ভিদ তৈরি করা হয়। অনেকটা পদ্ধতিতে মানুষের আমাটোপোয়েটিক টেম কোষ (HSCs) থেকে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করা হয়।




স্টেম কোষগুলো দান করা রক্ত অথবা হাড়ের মজ্জা থেকে সংগ্রহ করা হয়। বিজ্ঞানীরা প্রাপ্তবয়স্ক কোষ থেকেও স্টেম কোষ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গবেষণাগারে স্টেম কোষগুলোকে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান এবং গ্রোথ ফ্যাক্টর দিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লোহিত রক্ত কণিকায় (RBC) পরিণত করা হয়। এই কৃত্রিম RBC কে অক্সিজেন পরিবহনের পাশাপাশি বিভিন্ন চিকিৎসার কাজেও ব্যবহার করা যাবে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা এর মাধ্যমে ক্যান্সারের চিকিৎসায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা যাবে। এর মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষে কেমোথেরাপির ঔষধ সরাসরি পৌঁছানো যেতে পারে, যার মাধ্যমে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এই কৃত্রিম RBC এর সাথে বিভিন্ন ন্যানো পার্টিকেলস এর সংযুক্তি বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে ভবিষ্যতে এটিকে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের কাজে ব্যবহার করা যায়। যেহেতু এটি ল্যাবে তৈরি করা হয়নি তাই এর ব্যবহারে বিভিন্ন রক্ত বাহিত রোগ যেমন HIV , হেপাটাইটিস এর মত রোগের ঝুঁকি কম থাকে। সাধারণ রক্তের তুলনায় এটিকে অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়। ফলে যুদ্ধ কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে যখন অনেক রক্তের প্রয়োজন পড়ে তখন এই রক্তকে ব্যবহার করা যাবে।

এছাড়াও পৃথিবীতে কিছু রক্তের গ্রুপের মানুষের সংখ্যা অনেক কম। বেশিরভাগ সময়ই তাদের জন্য রক্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। কৃত্রিম রক্ত উৎপাদন করে এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। কৃত্রিম রক্ত ব্যবহার করে ইতোমধ্যেই মানুষের উপর পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তাতে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায়নি।

এখন পর্যন্ত এটি কেবল গবেষণাগারেই তৈরি করা হয়েছে, যা যথেষ্ট ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ। এই কৃত্রিম রক্তকে বড় পরিসরে কম খরচে উৎপাদন করার জন্য এখনও অনেক গবেষণা করা প্রয়োজন। এছাড়াও বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেও এই রক্ত মানবদেহে কি রকম আচরণ করে সে বিষয়েও বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
mehrab360
mehrab360https://www.mehrab360.com
হোসাইন হাওলাদার, mehrab360.com এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য, বিশ্লেষণ ও হালনাগাদ কনটেন্ট নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে। বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে জটিল প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো সহজভাবে তুলে ধরা। বিশ্বের প্রযুক্তি জগতের সর্বশেষ আপডেট, রিভিউ ও ব্যাখ্যামূলক কনটেন্ট পড়তে পারবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিজ্ঞাপনspot_img

এই সম্পর্কে আরো পড়ুন

পানামা খাল কেন তৈরি করা হয়েছিল?

ধরুন আপনি একজন নাবিক, বিশাল সমুদ্রযাত্রায় বের হয়েছেন। পাড়ি দিতে হবে আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগর। কিন্তু সামনে এক...

গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রাণীরা এত রঙিন কেন?

গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের বনজঙ্গল, নদী ও সমুদ্রের পানির নিচে থাকা প্রাণীগুলোকে দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। এদের শরীরজুড়ে থাকে লাল,...

মস্তিষ্কের কোষ কোন বয়সে বাড়ে?

বিকাশিত মানুষের মস্তিষ্ক যখন গর্ভে তখন কোটি কোটি নিউরন অর্জন করে এবং শৈশবে আরও কিছু নিউরনকে কাজে লাগায়।...

Google Pay বাংলাদেশে আসছে! সুবিধা কি?

গুগল পে আগামী এক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে চালু হতে যাচ্ছে। অনেকেই এই বিষয় নিয়ে জানতে চাচ্ছে। অনেক ধরনের...