ডেটল প্রকৃতপক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট একক জৈব যৌগ নয়। রেকিট বেনকিসার (Reckitt Benckiser) দ্বারা উৎপাদিত এন্টিসেপ্টিক পণ্য নাম। এটি একটি ট্রেড নাম, যা ডেটল নামে পরিচিত, যা মূলত এন্টিব্যাক্টেরিয়াল ও এন্টিসেপটিক হিসেবে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ওয়াসিং এর কাজেও এর ভূমিকা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
প্রস্তুতিঃ ডেটলের মধ্যে মূলত ক্লোরোজাইলিনল (C8H9CIO), আইসো প্রোপানল, পাইন ওয়েল, ক্যাস্টার ওয়েল, সাবান ও পানি বর্তমান থাকে। মূল উপাদান হিসেবে ক্লোরোজাইলিনল থাকে এবং এর পরিমাণ 4.8% (W/V) এবং টারপিনিওল এর পরিমাণ 9.9% (W/V)। ক্লোরোজাইলিনল আণবিক সংকেত C8H9CIO এবং এর গাঠনিক সংকেতঃ
সংগৃহীত | উইকিপিডিয়া |
এর অণুতে –OH গ্রুপ বর্তমান থাকায় ৩টি পানির অণুর সাথে হাইড্রোজেন বন্ধন গঠন করে পানিতে খুবই স্বল্প মাত্রায় দ্রবীভূত হয়; এর মান 330 mg/L । পাইন অয়েল একটি নন পোলার দ্রাবক। পাইন অয়েলে মূলত আলফা-টারপিনল। তবে এর মধ্যে যথেষ্ট টারপিনও থাকে। দ্রবণে এ দ্রাবক যোগ করে ক্লোরোজাইলিনল আরও অধিক পরিমাণে দ্রবীভূত করা হয়। দ্রবণে অতিরিক্ত সাবান (সোপ) যোগ করে দ্রবণকে ক্ষারীয় করা হয় এবং দ্রবণের pH মান 10 এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে আরও অধিক ক্লোরোজাইলিনল দ্রবীভূত হয় এবং এর পরিমাণ 48 g/L। সাবান ক্যাস্টার অয়েল হতে তৈরি, এর মধ্যে রাইসিনোলিক এসিড থাকে যা দ্রাব্যতা গুণ বৃদ্ধি করে। এ পর্যায়ে দ্রবণের মধ্যে প্রয়োজনীয় আইসো প্রোপানল ও পানি যোগ করে ডেটল উৎপাদন সম্পন্ন করা হয়। আইসোপ্রোপানল একটি কার্যকরী এন্টিব্যাক্টোরিয়াল উপাদান।
ডেটল একটি অত্যন্ত কার্যকরী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিসেপটিক হওয়ায় এর ব্যবহারিক ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত। শরীরের ক্ষতস্থানে, পচনশীল অংশে ও সাধারণ ড্রেসিং এর কাজে হসপিটালে এ উপাদানটিকে প্রতিদিন ব্যবহার করা হয়। পানিতে মিশ্রিত করলে সাদা ইমালশান তৈরি হয়। এ ইমালশানকে কাটা বা ক্ষতস্থান পরিস্কার করতে ব্যবহার করা হয়। ওয়াশিং এর ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার কম গুরুত্বপূর্ণ হয়। পাকা বাড়ির ফ্লোর পরিষ্কারের সময় পানিতে সামান্য দু’চার ফোঁটা ডেটল যোগ করে নিলে ফ্লোর অনেকটাই জীবাণুমুক্ত হয়। কোরবানীর সময় পশুর রক্ত, ময়লা পরিষ্কার করে ঐ স্থান ডেটল পানির দ্রবণ দ্বারা পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত।
ডেটল ও স্যাভলন উভয়কেই অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিসেপটিকরূপে ব্যবহার করা হলেও এ দুটি উপাদান কিন্তু এক নয়। ডেটল হলো ক্লোরোজাইলিনল ও টারপিনলের অ্যালকোহলীয় সল। আর স্যাভলন হলো 3% (W/V) ক্লোরোহেক্সিডিন গ্লুকোনেট ও 3% (W/V) সেট্রিমাইড (Setuimide) দ্রবণের মিশ্রণ। এ দুটি উপাদানকে আমরা দৈনন্দিন জীবনে যদিও একটিকে অন্যটির পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করে থাকি।
সতর্কতাঃ ঘরে বসে এই ধরনের রাসায়নিক মিশ্রণ তৈরি করা বিপজ্জনক এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ডেটল এবং অনুরূপ জীবাণুনাশক তৈরি করার জন্য যথাযথ সরঞ্জাম ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা জরুরি।{alertWarning}