প্রথমবারের মতো শোনা গেল হাঙ্গরের শব্দ!

Date:

শেয়ারঃ

আমরা সাধারণত হাঙরকে নীরব শিকারি হিসেবেই জানি। তারা পানির নিচে নিঃশব্দে চলাফেরা করে এবং শিকার ধরে, কোনো শব্দ ছাড়াই। কিন্তু এবার বিজ্ঞানীরা একটি আশ্চর্যজনক তথ্য আবিষ্কার করেছেন এক প্রজাতির হাঙর আসলে শব্দ করতে পারে! সম্প্রতি একদল গবেষক হাঙরের তৈরি ছোট, উচ্চ-কম্পাঙ্কের ক্লিক শব্দ রেকর্ড করেছেন। গবেষণাটি রয়েল সোসাইটি ওপেন ন্সাইনস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি প্রথমবারের মতো কোনো হাঙরকে সক্রিয়ভাবে শব্দ করতে দেখা গেল।

সংগৃহীত | সায়েন্স আমেরিকা

কীভাবে এই শব্দ আবিষ্কার হলো?

এই আবিষ্কারটি প্রথম করেন সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ক্যারোলিন নিডার, যখন তিনি নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছিলেন। তিনি মূলত রিগ হাঙর নামের একটি ছোট আকারের হাঙরের শ্রবণশক্তি নিয়ে গবেষণা করছিলেন। কিন্তু পরীক্ষার সময় তিনি লক্ষ করেন, যখনই তিনি এই হাঙরগুলোকে ধরতেন, তারা কেমন যেন ‘কড়কড়’ শব্দ করত। “শুরুতে আমরা বুঝতেই পারিনি যে এই শব্দ আসছে হাঙর থেকে, কারণ হাঙর তো কোনো শব্দই করে না!”—বলেছেন নিডার, যিনি বর্তমানে উডস হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউটে কাজ করছেন।

হাঙর কীভাবে শব্দ করছে?

আমরা জানি, ১০০০-র বেশি প্রজাতির মাছ শব্দ করতে পারে, সাধারণত তাদের সুইম ব্লাডার বা ভাসার থলি কম্পিত করে। কিন্তু রিগ হাঙরের কোনো সুইম ব্লাডার নেই! তাহলে তারা কীভাবে শব্দ করছে? গবেষকরা পরীক্ষা করতে ১০টি রিগ হাঙরকে একটি করে পানির ট্যাঙ্কে রাখেন এবং তাদের ধরার সময় রেকর্ডার দিয়ে শব্দ সংগ্রহ করেন। দেখা যায়, প্রতিটি হাঙর খুবই স্বল্প সময়ের জন্য উচ্চ-কম্পাঙ্কের ক্লিক শব্দ তৈরি করে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, হাঙর যখন প্রথম ধরা পড়ে, তখন সে বেশি ক্লিক করে, কিন্তু কিছুক্ষণ পর সেই শব্দ কমে যায়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি আসলে ভয় বা চমকানোর প্রতিক্রিয়া।

কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার হলো, এই ক্লিক শব্দ রিগ হাঙরের শ্রবণ ক্ষমতার বাইরে! অর্থাৎ, এটি তাদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য নয়। তবে এই শব্দ তোথেড হোয়েল (দাঁতওয়ালা তিমি) এবং অন্যান্য শিকারিদের শুনতে পারে, যারা রিগ হাঙর শিকার করে। গবেষকরা মনে করেন, রিগ হাঙরের দাঁতের বিশেষ গঠনই এই শব্দ তৈরির জন্য দায়ী। তাদের দাঁত মোজাইক আকৃতির এবং শক্ত খোলসযুক্ত শিকার (যেমন কাঁকড়া) ভাঙতে সাহায্য করে। ধারণা করা হচ্ছে, এই দাঁত দ্রুত একে অপরের সাথে ঠোকা লাগানোর ফলে শব্দটি তৈরি হয়।

কানাডার উইন্ডসর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ডেনিস হিগস বলেন, “এই গবেষণা প্রমাণ করছে যে কিছু হাঙর সত্যিই শব্দ করতে পারে। তবে আরও গবেষণা দরকার, বিশেষ করে প্রাকৃতিক পরিবেশে তারা এভাবে শব্দ করে কি না, সেটি জানার জন্য।” নিডারও একমত এবং ভবিষ্যতে আরও পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করছেন, বিশেষ করে হাঙরের স্বাভাবিক পরিবেশে এই শব্দ তৈরির বিষয়টি বোঝার জন্য। এটি শুধু রিগ হাঙরের ক্ষেত্রেই নয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, স্টিংরে ও স্কেট নামের আরও দুটি কার্টিলাজিনাস মাছ (যাদের শরীরে হাড়ের বদলে তরুণাস্থি থাকে) শব্দ করতে পারে! এই আবিষ্কার ইঙ্গিত দেয় যে শব্দ তৈরি করা হয়তো অনেক আগে থেকেই হাঙর ও তাদের আত্মীয়দের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল, যা আজও টিকে আছে।

গবেষকরা বলছেন, 

আমরা আগে ভাবতাম হাঙর শব্দ করে না, কিন্তু তারা আমাদের ভুল প্রমাণ করছে! আরও হাঙরের শব্দ শোনা দরকার।{alertSuccess}

mehrab360
mehrab360https://www.mehrab360.com
হোসাইন হাওলাদার, mehrab360.com এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য, বিশ্লেষণ ও হালনাগাদ কনটেন্ট নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে। বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে জটিল প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো সহজভাবে তুলে ধরা। বিশ্বের প্রযুক্তি জগতের সর্বশেষ আপডেট, রিভিউ ও ব্যাখ্যামূলক কনটেন্ট পড়তে পারবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিজ্ঞাপনspot_img

এই সম্পর্কে আরো পড়ুন

২,৯০০ বছর আগে সৈন্যরা নদী পারাপারে ছাগলে চামড়া ব্যবহারের সন্ধান

এ্যাসিরিয়ান সৈন্যরা নদী সাঁতার কাটার জন্য ছাগলের চামড়া ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।নিমরুদে পাওয়া একটি খোদাই করা দেওয়ালে এ্যাসিরিয়ান...

অগ্নিশিখার রহস্যঃ অক্সিজেনের আবিষ্কার

আমরা যে প্রতি মুহূর্তে শ্বাস নিই, সেই বাতাসটা আসলে কী দিয়ে তৈরি? আবার ধরুন, মোমবাতি বা চুলার আগুন...

পানামা খাল কেন তৈরি করা হয়েছিল?

ধরুন আপনি একজন নাবিক, বিশাল সমুদ্রযাত্রায় বের হয়েছেন। পাড়ি দিতে হবে আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগর। কিন্তু সামনে এক...

গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রাণীরা এত রঙিন কেন?

গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের বনজঙ্গল, নদী ও সমুদ্রের পানির নিচে থাকা প্রাণীগুলোকে দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। এদের শরীরজুড়ে থাকে লাল,...