ফ্যানের সুইচ বন্ধের পরও ফ্যান সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয় না কেন?

Date:

শেয়ারঃ

ফ্যানের সুইচ বন্ধ করার পরও পাখা সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ না হওয়ার প্রধান কারণ হলো ঘূর্ণনজড়তা বা রোটেশনাল ইনর্শিয়া। যখন ফ্যান চালু করা হয়, তখন মোটর পাখার ব্লেডগুলোর গতি বৃদ্ধি করে এবং একবার নির্দিষ্ট গতি অর্জন করলে এটি অব্যাহতভাবে ঘুরতে থাকে। সুইচ বন্ধ করার পর মোটর বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু ব্লেডগুলো সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায় না কারণ তারা চলমান থাকার প্রবণতা বজায় রাখে। এই প্রবণতাই মূলত নিউটনের গতির প্রথম সূত্র অনুযায়ী কোনো বস্তুর গতিশীলতা অব্যাহত রাখার প্রবণতা প্রকাশ করে, যা ঘূর্ণনজড়তা নামে পরিচিত। ফলে, পাখার ব্লেডগুলো ধীরে ধীরে গতিশক্তি হারিয়ে অবশেষে থেমে যায়।

ফ্যানের মোটর এবং বিয়ারিংও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অধিকাংশ ফ্যানের মোটরে এমন বিয়ারিং ব্যবহার করা হয় যা ঘর্ষণ কমিয়ে ফ্যানের গতি ধরে রাখতে সাহায্য করে। যদি ফ্যানের বিয়ারিং ভালো অবস্থায় থাকে, তবে এটি কম ঘর্ষণের কারণে দীর্ঘক্ষণ চলতে পারে। আবার, যদি বিয়ারিং বা মোটরে কোনো সমস্যা থাকে, যেমন শুষ্ক বা ক্ষতিগ্রস্ত বিয়ারিং, তাহলে ফ্যান তুলনামূলক দ্রুত থেমে যেতে পারে। কিছু ফ্যানের ক্ষেত্রে বিয়ারিংয়ের গুণমান এবং তৈলাক্তকরণের পরিমাণ ফ্যানের ঘূর্ণনের স্থায়িত্ব নির্ধারণ করে।

ক্যাপাসিটরের ভূমিকা এখানেও গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ফ্যান মোটরে ক্যাপাসিটার ব্যবহার করা হয়, যা মোটরকে চালু ও বন্ধ করার সময় নির্দিষ্ট মাত্রায় চার্জ ধরে রাখে। যখন সুইচ বন্ধ করা হয়, তখন ক্যাপাসিটরে থাকা অবশিষ্ট চার্জ ধীরে ধীরে নির্গত হতে থাকে, যার ফলে মোটর কিছুক্ষণ কাজ চালিয়ে যেতে পারে। যদিও এটি দীর্ঘ সময় ধরে ফ্যানকে সচল রাখতে পারে না, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যাপাসিটরের চার্জ ফুরানোর আগ পর্যন্ত ফ্যান কিছুটা সময় চলতে থাকে।

এছাড়া, বাতাসের প্রতিরোধও ফ্যানের ধীর গতিতে থামার একটি কারণ। যখন ফ্যান ঘুরতে থাকে, তখন ব্লেডগুলো বাতাসের বিপরীতে শক্তি প্রয়োগ করে। বাতাসের ঘর্ষণ ও প্রতিরোধের কারণে ফ্যান ধীরে ধীরে গতিশক্তি হারিয়ে থেমে যায়। ব্লেডের আকৃতি এবং উপাদান অনুযায়ী এটি দ্রুত বা ধীরে থামতে পারে। হালকা ব্লেডযুক্ত ফ্যান তুলনামূলক দ্রুত থেমে যায়, আর ভারী ব্লেডযুক্ত ফ্যান দীর্ঘক্ষণ ঘুরতে থাকে।

কিছু আধুনিক ফ্যান দ্রুত থামানোর প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যেমন ইলেকট্রনিক ব্রেকিং সিস্টেম, যা সুইচ বন্ধ করার পর পাখাকে দ্রুত থামিয়ে দেয়। তবে সাধারণ ফ্যানগুলোতে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয় না। ফলে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও ফ্যানের ব্লেডগুলো কিছু সময় ধরে ঘুরতেই থাকে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি শারীরিক গতিবিদ্যার নিয়ম অনুযায়ী ঘটে এবং এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা।

প্যানের সুইচ অফ করার পরও পাখা সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ না হওয়ার প্রধান কারণ হলো ঘূর্ণনজড়তা (rotational inertia)। ঘূর্ণনজড়তাঃ বৈদ্যুতিক পাখার ব্লেডগুলো একটি নির্দিষ্ট গতি বা ভরবেগ (momentum) নিয়ে ঘোরে। সুইচ বন্ধ করলে মোটরের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও ব্লেডগুলো ধীরে ধীরে থামে কারণ তাদের চলমান থাকার স্বাভাবিক প্রবণতা থাকে। বিয়ারিং ও ঘর্ষণঃ  পাখার মোটর ও বিয়ারিংগুলো কম ঘর্ষণযুক্ত উপাদানে তৈরি থাকে, যাতে বিদ্যুৎ বন্ধ হওয়ার পরও কিছুক্ষণ ঘূর্ণন অব্যাহত থাকে। ক্যাপাসিটরের প্রভাবঃ কিছু ফ্যানের মোটরে ক্যাপাসিটার ব্যবহৃত হয়, যা মোটরকে চালু ও বন্ধ করার প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। কখনো কখনো ক্যাপাসিটরে জমে থাকা চার্জ ধীরে ধীরে মুক্ত হয়, যা ফ্যানের ধীর গতিতে বন্ধ হওয়ার কারণ হতে পারে। বাতাসের প্রতিরোধঃ ফ্যানের ব্লেড বাতাস কাটতে কাটতে ধীরে ধীরে গতি হারায়। বাতাসের প্রতিরোধ ও ব্লেডের আকৃতি অনুযায়ী এটি দ্রুত বা ধীরে থামতে পারে। যদি ফ্যানের বিয়ারিং বা মোটরে কোনো সমস্যা থাকে, তবে এটি অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত থেমে যেতে পারে। কিছু আধুনিক ফ্যান ব্রেকিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা সুইচ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে ফ্যানকে দ্রুত থামিয়ে দেয়। সুতরাং, এটি পুরোপুরি স্বাভাবিক যে সুইচ বন্ধ করলেও পাখা কিছু সময় পরে বন্ধ হয়।

mehrab360
mehrab360https://www.mehrab360.com
হোসাইন হাওলাদার, mehrab360.com এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য, বিশ্লেষণ ও হালনাগাদ কনটেন্ট নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে। বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে জটিল প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো সহজভাবে তুলে ধরা। বিশ্বের প্রযুক্তি জগতের সর্বশেষ আপডেট, রিভিউ ও ব্যাখ্যামূলক কনটেন্ট পড়তে পারবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিজ্ঞাপনspot_img

এই সম্পর্কে আরো পড়ুন

২,৯০০ বছর আগে সৈন্যরা নদী পারাপারে ছাগলে চামড়া ব্যবহারের সন্ধান

এ্যাসিরিয়ান সৈন্যরা নদী সাঁতার কাটার জন্য ছাগলের চামড়া ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।নিমরুদে পাওয়া একটি খোদাই করা দেওয়ালে এ্যাসিরিয়ান...

অগ্নিশিখার রহস্যঃ অক্সিজেনের আবিষ্কার

আমরা যে প্রতি মুহূর্তে শ্বাস নিই, সেই বাতাসটা আসলে কী দিয়ে তৈরি? আবার ধরুন, মোমবাতি বা চুলার আগুন...

পানামা খাল কেন তৈরি করা হয়েছিল?

ধরুন আপনি একজন নাবিক, বিশাল সমুদ্রযাত্রায় বের হয়েছেন। পাড়ি দিতে হবে আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগর। কিন্তু সামনে এক...

গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রাণীরা এত রঙিন কেন?

গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের বনজঙ্গল, নদী ও সমুদ্রের পানির নিচে থাকা প্রাণীগুলোকে দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। এদের শরীরজুড়ে থাকে লাল,...