ব্ল্যাক হোলের মহাকর্ষ বল যেহেতু অত্যধিক বেশি তাই এটি আশেপাশের নক্ষত্র সহ মহাকাশীয় বস্তুকে নিজের ভেতর গ্রাস করতে চায়। প্রশ্ন হলো এটি কতদূরের বস্তুকে গ্রাস করতে পারে? ব্ল্যাক হোলের চারপাশে একটি সীমারেখা কল্পনা করা হয় যা ইভেন্ট হরাইজন বা ঘটনা দিগন্ত নামে পরিচিত। এ সীমার ভেতরে প্রবেশ করলে কোনো কিছুই (এমনকি আলো) ব্ল্যাক হোলের মহাকর্ষ বল অতিক্রম করে বাইরে আসতে পারে না। ধরুন আপনার বাসায় হাত ধোয়ার বেসিনের ছিদ্রটি বন্ধ করে একে পানিপূর্ণ করে নিন। এবার ছিদ্রটি খুলে দিলে দেখবে প্রথমে পানি স্বাভাবিক গতিতে পড়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে ছিদ্রের কাছে পানির একটি ঘূর্ণি দেখা দেবে। এ ঘূর্ণিতে ছোট কোনো বস্তু যেমন মুড়ি দিলে দেখবে তা অতিদ্রুত বেসিনের ছিদ্রের দিকে চলে যাবে। ব্ল্যাক হোল অনেকটা এভাবেই ইভেন্ট হরাইজনের কাছে চলে আসা বস্তুকে গ্রাস করে।
এবার আসা যাক হোয়াইট হোলের আলোচনায়। ৭০ এর দশকে রজার পেনরোজ ব্ল্যাক হোলের বিপরীত একটি বস্তুর ধারণা নিয়ে আসেন। তিনি এর নাম দেন হোয়াইট হোল।
ব্ল্যাক হোল ও হোয়াইট হোলের মূল পার্থক্যের বিষয় হলো একটি পদার্থ বা ম্যাটার গ্রাস করে আর অন্যটি নির্গত করে। ব্ল্যাক হোলের মতো হোয়াইট হোলেরও রয়েছে একটি ইভেন্ট হরাইজন তবে ব্ল্যাক হোলের মতো এটি গ্রাস করে না।(alert-success)
বরং ম্যাটার নিক্ষেপ করে। এতেও রয়েছে একটি অসীম ঘনত্বের পরমবিন্দু বা সিঙ্গুলারিটি। ব্ল্যাক হোলের ক্ষেত্রে পরমবিন্দুর অবস্থান ভবিষ্যতে। অর্থাৎ ব্ল্যাকহোলের ইভেন্ট হরাইজনের ভেতরে কোনো বস্তু প্রবেশ করলে তার সময় অত্যন্ত ধীর হয় যায়। ফলে তা সর্বদা সিঙ্গুলারিটির দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু কখনো তা স্পর্শ করতে পারে না। অন্যদিকে হোয়াইট হোলের সিঙ্গুলারিটি থেকে সর্বদা পদার্থ নির্গত হতে থাকে। এজন্য বলা হয়, হোয়াইট হোলের সিঙ্গুলারিটি অতীতে অবস্থান করে। তাই, কোনো বন্ধু হোয়াইট হোলের ইভেন্ট হরাইজনের ভেতর প্রবেশ করতে পারে না। অর্থাৎ ব্ল্যাক হোল আর হোয়াইট হোল সময়ের সাপেক্ষে একে অপরের বিপরীত দিকে চলে।
হোয়াইট হোল আদৌ আছে কিনা তা নিয়েই বিজ্ঞান মহলে রয়েছে নানান মতামত। অনেকের মতে হোয়াইট হোল আর ব্ল্যাক হোল হলো দুই জমজ ভাইয়ের মতো। ব্যাপারটা এভাবে ভাবতে পারো। ২ এর বর্গ যেমন ৪, তেমনি-২ এর বর্গ করলেও ৪ পাওয়া যায়। তাহলে ৪ এর বর্গমূল কত হবে? নিশ্চয়ই ২ এবং ২। তেমনি আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সমাধান করলে ব্ল্যাক হোলের পাশাপাশি আরও একটি বস্তুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। একেই আমরা বলছি হোয়াইট হোল। আপেক্ষিকতা তত্ত্ব থেকে হোয়াইট হোলের ধারণা পাওয়া গেলেও এটি কীভাবে সৃষ্টি হবে তা এখনও একটি রহস্য।
হোসাইন হাওলাদার, mehrab360.com এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য, বিশ্লেষণ ও হালনাগাদ কনটেন্ট নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে। বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে জটিল প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো সহজভাবে তুলে ধরা। বিশ্বের প্রযুক্তি জগতের সর্বশেষ আপডেট, রিভিউ ও ব্যাখ্যামূলক কনটেন্ট পড়তে পারবেন। Email: info@mehrab360.com