আমরা সকলে আলবার্ট আইনস্টাইন কে চিনি কিন্তু তার কিছু অজানা তথ্য আছে তা আমাদেরকে সকলকে জানতে হবে। অনেক কিছু শিখতে পারবেন তাই পড়তে থাকুন আজকের আপডেট।
পাঁচ বছরের একটি ছেলে বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে। এই কিছুদিন পাঁ হলো সে অসুখ থেকে সেরে উঠেছে, কিন্তু এখনও তার জ্বর-জ্বর মনে হচ্ছে। ছেলের এই অস্বস্তি দেখে তার বাবা বেশ উদ্বিগ্ন হলেন। তিনি তাকে এমন একটা ছোট খেলনা দিতে চাইলেন, যা তার অস্বস্তির কারণ না হয়ে তাকে আনন্দই দেবে। তিনি ছেলের হাতে একটা নৌ-কম্পাস এনে দিলেন এই ভেবে যে, কম্পাস-বাক্সের মধ্যেকার ঘূর্ণমান কাঁটাটা হয়তো তার মনে কিছু আনন্দের খোরাক যোগাবে। তখন কিন্তু তিনি উপলব্ধি করতে পারেননি যে, কি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের সূচনা তিনি করে দিলেন। যন্ত্রটা পেয়ে ছেলেটি প্রথমে অলসভাবেই তা নাড়াচাড়া করল। কিন্তু পরে যখন সে দেখল একটা সজীব পদার্থের মতো সেটা সবসময় নড়াচড়া করছে, তখন জিনিসটার প্রতি সে কৌতূহলী হয়ে উঠল। এতক্ষণ সে বিছানায় শুয়ে শুয়েই যন্ত্রটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল, কিন্তু এবার জিনিসটাকে ভালো করে দেখবার জন্যে সে উঠে বসল।
ক্ষুদ্র বাক্সটা হাতে নিয়ে সে যখন দেখল, বাক্সের ভেতরকার কাঁটাটা তার ঘরবাড়ির বাইরে পৃথিবীর প্রান্তভাগের এক রহস্যময় শক্তির প্রভাবে ঘুরছে, তখন উত্তেজনায় সে কাঁপতে লাগল। বিজ্ঞানের রহস্যময় জগতের সঙ্গে এই হলো আলবার্ট আইনস্টাইনের প্রথম পরিচয়। এতক্ষণ তার যে ছটফটানি ছিল তা দূর হয়ে গেল। সে চিৎ হয়ে বালিশে এপাশ-ওপাশ করতে লাগল। কম্পাসটা ছেলেকে কেন উত্তেজিত করছে, তার কারণ বুঝতে না পেরে বাবা একটু ভয় পেয়ে গেলেন। কিন্তু ছেলে তাঁকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যেতে লাগল। তিনি তার উত্তর দেবার চেষ্টা করলেন।
ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির রহস্যে আলবার্ট মুগ্ধ হয়ে থাকত। ছোট ছেলেরা সাধারণত ছোটাছুটি ও খেলা করে বেড়ায়। কিন্তু প্রকৃতির প্রতি আকর্ষণের দরুন আলবার্ট অন্যান্য ছেলের কাছ থেকে আলাদা হয়ে থাকত।- ছেলেদের ছুটোছুটি চিৎকার ভুলে গিয়ে সে শান্ত ও স্বপ্নালু হয়ে একা ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসত। যে ছেলের মধ্যে এত অল্প বয়সে বিজ্ঞানের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠেছিল, তাকে কোনো কোনো ব্যাপারে কিন্তু পিছিয়ে পড়া বলে মনে হতো। কথা বলতে শেখা ও নিজেকে প্রকাশ করার ব্যাপারে তার দেরি হয়েছিল অনেক। চলাফেরার ব্যাপারেও সে ছিল মন্থর। সৌভাগ্যক্রমে বালক আলবার্ট এমন মা-বাবা পেয়েছিল, যাঁরা পরম ধৈর্যের সঙ্গে তাকে বোঝাবার চেষ্টা করতেন।
আমরা কোনো সময় এমন ঘটনার কথা জানি না যখন তাঁরা বালক আলবার্টকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজে বা বন্ধুত্ব স্থাপনে বাধ্য করতেন। শুধু এক স্কুলে পাঠাবার সময় তাঁরা জোর করতেন এবং সেটা না করে তাঁদের উপায়ান্তর ছিল না। সারা জীবন ধরে, বিশেষ করে শিশু বয়সে, আলবার্ট ছিল ভীষণ লাজুক। তার মা-বাবা একথা জানতেন বলেই তাঁরা তাকে মনমতো বন্ধু ছেড়ে অন্য ছেলেদের সঙ্গে খেলা করবার জন্যে চাপ দিতেন না। চিন্তাশীল ও কল্পনাপ্রবণ এই ছেলেটি প্রকৃতি, ফুল-পাখি ও তার বাবার বাগানের যাবতীয় আশ্চর্যজনক জিনিস নিয়েই মেতে থাকতে ভালোবাসত। বাবার বাগানে সে খেলা করত এবং নিজে গান বেঁধে নিজের মনেই গাইত। জার্মানির দক্ষিণে ব্যাভেরিয়া নামে একটি প্রদেশ আছে। এই প্রদেশের উলম শহরে ১৮৯৭ সালের ১৪ মার্চ আলবার্ট আইনস্টাইনের জন্ম হয়। ডানিয়ুব নদীর বাম তীরে উলম শহরটি অবস্থিত। এই শহরটি তিনটি নদীর সঙ্গমস্থল। ইলার নদী শহরের ঠিক ওপরের দিকে ডানিয়ুব নদীতে এসে পড়েছে। শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে ছোট নদী ব্লাউ এবং ঠিক নিচে ডানিয়ুব এসে মিলেছে। ব্লাউ নদীর একেবারে জলের ধারে ষোড়শ শতাব্দীর বিচিত্র ঘরবাড়ি দেখা যায়।
নবম শতাব্দী থেকে উলম শহরের পথের ওপর বহু ইতিহাস রচিত হয়েছে। ইউরোপের অপর যে কোনো স্থান অপেক্ষা দীর্ঘকাল ধরে সেখানে মিয়েস্তার সিঙ্গারস সম্প্রদায় সংগীত-উৎসব ও প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান করেছে। এমনকি উৎসবের মধ্যে সুপ্রসিদ্ধ হানস সার্কাসের উপস্থিতিও অসম্ভব নয়। এই শহরে সেনাপতি ম্যাক ও তার অস্ট্রীয় সৈন্যরা নেপোলিয়নের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা সুন্দর গথিক গীর্জাসমূহের অন্যতম সেখানে অবস্থিত। শহরের ঘরবাড়ির শীর্ষদেশ ছাড়িয়ে এই গীর্জার চূড়া গগন স্পর্শ করেছে। উলম-এর এই সমস্ত ঐতিহ্যমণ্ডিত পটভূমিকায় অ্যালবার্ট আইনস্টাইন জন্মগ্রহণ করেন।
পুত্র-সন্তানের জন্মে আইনস্টাইন দম্পতিকে অভিনন্দন জানাতে এলেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু যাঁরা তখন মানবসভ্যতার অন্যতম মহা-মনীষীর আবির্ভাবকে স্বাগত জানাননি। এবং প্রবীন পারিবারিক ডাক্তারও প্রসবের কাজ সুসম্পন্ন হওয়ায় স্বভাবতই আনন্দিত হয়েছিলেন; কিন্তু তিনি তখন উপলব্ধি করতে পারেননি যে মানবজাতির প্রতি কী এক মহৎ কর্তব্য তিনি সম্পাদনা করলেন। অ্যালবার্ট যখন মাত্র এক বছরের শিশু, তখন তার মা-বাবা উলম শহর ছেড়ে অপর একটি ঐতিহাসিক ও আগের মতোই সৌন্দর্যমণ্ডিত শহরে চলে এলেন। এই শহরটির নাম মিউনিক। এটি দক্ষিণ জার্মানির অন্তর্গত ব্যাভেরিয়ার গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত। অ্যালবার্টের বয়স যখন দু বছর তখন মিউনিকে তার বোন মাজা জন্মগ্রহণ করে। এরপর তার আর কোনো ভাইবোন হয়নি। সুতরাং মাজাকে নিয়েই তাদের চারজনের পরিবার সম্পূর্ণ হলো।
(full-width)