আমরা দৈনন্দিন জীবনে ভাষা ব্যবহার করি, তাই আমাদের একটা প্রশ্ন জাগে যে কীভাবে কৃত্রিম ভাষা এলো? আজকের এই পোস্টে শোনাবো কৃত্রিম ভাষা সৃষ্টি হলো….
![]() |
সংগৃহীত |
কৃত্রিম ভাষা (Artificial languages) হচ্ছে সেইসব ভাষা যেগুলি কম্পিউটার ছদ্মায়নের (computer simulation) সময় বিভিন্ন কৃত্রিম ঘটকের (artificial agent) মধ্যে, বা রোবটদের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়ায় কিংবা মানুষদের নিয়ে করা নিয়ন্ত্রিত মনোবৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় উদ্ভূত হয়। কৃত্রিম ভাষা নির্মিত ভাষা এবং বিধিবদ্ধ ভাষা উভয় থেকেই ভিন্ন, কেননা এগুলি কোন ব্যক্তি বা দল দ্বারা পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয় না। বরং এগুলি স্বাভাবিক ভাষার মতোই একধরনের কথ্যরীতি নির্মাণ প্রক্রিয়ার ফসল।
কৃত্রিম ভাষা সম্পর্কিত একটি পরিসংখ্যানঃ
লাতিন ভাষার আন্তর্জাতিক ভূমিকা ধীরে ধীরে হ্রাসের ফলে ১৭ এবং ১৮ শতকে কৃত্রিম ভাষা তৈরির ধারণার উদ্ভব হয়েছিল।
ব্যাকরণ পড়ার সময় আমরা প্রায়শই হোঁচট খাই ব্যতিক্রম উদাহরণগুলো মনে রাখতে গিয়ে। একবার ভেবে দেখো তো, কেমন হতো যদি একটা ভাষায় ব্যতিক্রম কিছু না থাকত? কিংবা ব্যাকরণের নিয়মকানুন যদি খুবই সরল হতো?
এই প্রশ্নগুলো মানুষকে ভাবিয়েছে। আর এই ভাবনা জন্ম দিয়েছে কৃত্রিম ভাষার (Constructed Language/ Conlang)। তবে কৃত্রিম ভাষার জন্মের ইতিহাসটা স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক ভাষার মত না। স্বাভাবিক ভাষাগুলোর উৎপত্তি একটা অঞ্চলের মানুষের মাঝে যোগাযোগের মাধ্যমে। অপরদিকে, কৃত্রিম ভাষা কোনো ব্যক্তি বা কিছু মানুষ মিলেই বানিয়ে ফেলতে পারে।
এই ভাষাগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থাকে সহজ কিছু নিয়ম আর অল্প কিছু শব্দ। যেমন ধরা যাক এস্পেরান্দো (Esperando) ভাষাটির কথা। আমরা বাংলা অথবা ইংরেজিতে বিপরীত অর্থ প্রকাশ করতে নানা রকম উপসর্গ বা Prefix ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এস্পেরান্দোতে Prefix মাত্র দুটি- Mal, Ne.
ভাষাটির উচ্চারণও বেশ সাবলীল। অর্থাৎ স্বাভাবিক ভাষার মতো বানান আর উচ্চারণে পার্থক্য নেই। যেমন ইংরেজিতে ‘Often’ এর উচ্চারণে t উহ্য থাকে।
বিভিন্ন রকম কৃত্রিম ভাষা তৈরি হয় বিভিন্ন উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে। এস্পেরান্দো ভাষার জন্ম হয়েছে পোল্যান্ডের যামেনহফ নামের একজন চিকিৎসকের দশ বছরের সাধনায়। উনিশ শতকে ইউরোপের বিভিন্ন ভাষাভাষী অঞ্চলের মানুষের মাঝে রেষারেষি ছিল। তিনি চেয়েছিলেন একটি সহজ ভাষায় যেন ইউরোপের সকল মানুষ কথা বলে, আর ভাষাগত বিভেদ দূর হয়।
আমরা যারা ‘লর্ড অফ দা রিংস’ পড়েছি বা মুভি দেখেছি তারা এল্ভস জাতিদের একটি অন্যরকম ভাষায় কথা বলতে দেখেছি। এটা হল এল্ভিস ভাষা। লেখক জে আর আর টকিয়েন এই কৃত্রিম ভাষাটি সৃষ্টি করেছেন।
মজার ব্যাপার হলো, তিনি এতেই ক্ষান্ত হন নি, সময় ও অবস্থানভেদে স্বাভাবিক ভাষার মত এল্ভস ভাষার বিভিন্ন আঞ্চলিক রূপও দিয়েছেন। একইভাবে ‘গেম অফ থ্রোন্স’ এ আমরা ডথ্রাকি ও ভেলারিয়ান নামে দুইটি কৃত্রিম ভাষা দেখতে পাই। কিংবা এভাটার মুভিতে লক্ষ্য করি নাভিই নামের আরেকটি ভাষা। মুভি বা সিরিজে এসব ভাষা ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন কাল্পনিক জাতির মাঝে বৈচিত্র্য ফুটিয়ে তোলার জন্য।
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট টোকি পোনা ভাষাটিও একটি কৃত্রিম ভাষা। কানাডার ভাষাতত্ত্ববিদ সোনিয়া লাং মাত্র ১৪৪ টি শব্দ দিয়ে এই ভাষাটিকে সৃষ্টি করেছেন। এই ভাষাটি তৈরির পিছনে তার একটি উদ্দেশ্য ছিল, মানুষের মাঝে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করা। ঠিক এই কারণেই টোকি পোনা ভাষাটি ইতিবাচক শব্দবহুল। আর তাই একে বলা হয় The Language of Good.
প্রতিনিয়ত বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বৈচিত্র্যময় সব ভাষার উদ্ভব ঘটছে। নতুন ভাষা তৈরির কাজটি বেশ মজার। একদিন হয়তো তোমাদের হাত ধরেই জন্ম হবে নতুন কোনো ভাষার, আরো সমৃদ্ধ হবে পৃথিবীর শব্দভান্ডার !
তবে এর জন্য প্রয়োজন ভাষার মৌলিক উপাদানগুলোর সুস্পষ্ট ধারণা ও ভাষাবিজ্ঞানের অগাধ জ্ঞান।
বিবর্তনীয় ভাষাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতামূলক প্রমাণের অভাব অনেক গবেষককে কৃত্রিম এজেন্টরা প্রাকৃতিক-সদৃশ বৈশিষ্ট্য সহ ভাষাগুলিকে স্ব-সংগঠিত করার উপায়গুলি তদন্ত করার উপায় হিসাবে কম্পিউটার সিমুলেশন গ্রহণ করতে পরিচালিত করেছে। এই গবেষণাটি এই অনুমানের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে যে প্রাকৃতিক ভাষা একটি জটিল অভিযোজিত ব্যবস্থা যা ব্যক্তিদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভূত হয় এবং এর ব্যবহারকারীদের চাহিদা এবং ক্ষমতার সাথে খাপ খাইয়ে রাখার জন্য বিকশিত হতে থাকে। কম্পিউটার সিমুলেশনে স্পষ্টভাবে সমস্ত অনুমান তৈরি করে, গবেষণার এই স্ট্র্যান্ডটি নিয়ন্ত্রিত অবস্থার অধীনে ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কিত প্রশ্নগুলির অন্তর্নিহিত ভাষা পরিবর্তনের গতিশীলতা পরীক্ষামূলকভাবে তদন্ত করার চেষ্টা করে।
- Contact Us.
- Facebook: www.fb.com/mehrab360.bd
- Instagram: www.instagram.com/hossainh2005
- X: www.x.com/hossainh2005
- © Mehrab360 Media Ltd.