চোখের পাতা কাঁপে কেন?

Date:

শেয়ারঃ

চোখের পাতা কাঁপা বা eyelid twitching একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা, যা প্রায় প্রত্যেকেই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে অনুভব করে থাকেন। এটি অনেক সময় হালকা ও স্বল্পস্থায়ী হয়, আবার কখনো কখনো দীর্ঘস্থায়ী ও বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে। যদিও এই ঘটনা অনেক সময় কুসংস্কারের সঙ্গে জড়িয়ে দেখা হয়। যেমন, কেউ কেউ মনে করেন চোখের পাতা কাঁপলে শুভ বা অশুভ কিছু ঘটতে চলেছে—তবে বাস্তবে এটি একটি স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া বা মাংসপেশির অস্বাভাবিক সংকোচনের ফল। চোখের পাতা কাঁপার ক্ষেত্রে সাধারণত চোখের চারপাশের orbicularis oculi নামক একধরনের ক্ষুদ্র পেশি অনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত হয়। এই সংকোচন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনিচ্ছাকৃত ও ক্ষণস্থায়ী হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে myokymia বলা হয়। এটি কোনো গুরুতর রোগের লক্ষণ নাও হতে পারে, তবে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে বা অতিরিক্ত হলে, তা স্নায়বিক বা চক্ষু সংক্রান্ত সমস্যা হয়।

দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার, মোবাইল বা টিভি স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখে চাপ পড়ে এবং চোখের পেশিগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এতে করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে চোখের পাতা কাঁপতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের অন্যান্য পেশির মতো চোখের পেশিতেও ক্লান্তি ও অস্থিরতা দেখা যায়, যা কাঁপুনির সৃষ্টি করতে পারে। মানসিক উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা বা স্ট্রেস শরীরের স্নায়ুব্যবস্থায় প্রভাব ফেলে। এর ফলে চোখের পেশিতে অনিয়ন্ত্রিত সংকোচন হয় এবং পাতা কাঁপে। অতিরিক্ত চা, কফি বা অ্যালকোহল সেবনও স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে চোখের পাতা কাঁপার কারণ হতে পারে। যারা বেশি সময় এসি রুমে থাকেন বা যারা কম পলক ফেলেন, তাদের চোখে শুষ্কতা দেখা যায়। ড্রাই আই থেকেও চোখের পাতায় অস্বস্তি ও কাঁপুনি দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন B-এর অভাব চোখের পেশিকে দুর্বল করে তোলে এবং কাঁপুনির সৃষ্টি হয়।

সাধারণত চোখের ওপরের বা নিচের পাতায় এই কাঁপুনি হয়। এটি কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে এটি দিনের মধ্যে কয়েকবার হয় এবং কয়েকদিন চলতে পারে। কখনো কখনো চোখ কাঁপার সঙ্গে হালকা টান বা জ্বালাভাবও দেখা দিতে পারে। চোখের পাতা কাঁপার ঘটনা সাধারণত ক্ষণস্থায়ী। এটি আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ অবস্থা সম্পর্কে কিছু ইঙ্গিত দিতে পারে। নিয়মিত বিশ্রাম, সুষম খাদ্য এবং মানসিক প্রশান্তিই এই সমস্যার সহজ ও কার্যকর প্রতিকার। তবে দীর্ঘস্থায়ী বা অতিরিক্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কুসংস্কারের বশবর্তী না হয়ে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এই বিষয়টির দিকে নজর দেওয়াই যুক্তিসঙ্গত।

mehrab360
mehrab360https://www.mehrab360.com
হোসাইন হাওলাদার, mehrab360.com এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য, বিশ্লেষণ ও হালনাগাদ কনটেন্ট নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে। বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে জটিল প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো সহজভাবে তুলে ধরা। বিশ্বের প্রযুক্তি জগতের সর্বশেষ আপডেট, রিভিউ ও ব্যাখ্যামূলক কনটেন্ট পড়তে পারবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিজ্ঞাপনspot_img

এই সম্পর্কে আরো পড়ুন

২,৯০০ বছর আগে সৈন্যরা নদী পারাপারে ছাগলে চামড়া ব্যবহারের সন্ধান

এ্যাসিরিয়ান সৈন্যরা নদী সাঁতার কাটার জন্য ছাগলের চামড়া ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।নিমরুদে পাওয়া একটি খোদাই করা দেওয়ালে এ্যাসিরিয়ান...

অগ্নিশিখার রহস্যঃ অক্সিজেনের আবিষ্কার

আমরা যে প্রতি মুহূর্তে শ্বাস নিই, সেই বাতাসটা আসলে কী দিয়ে তৈরি? আবার ধরুন, মোমবাতি বা চুলার আগুন...

পানামা খাল কেন তৈরি করা হয়েছিল?

ধরুন আপনি একজন নাবিক, বিশাল সমুদ্রযাত্রায় বের হয়েছেন। পাড়ি দিতে হবে আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগর। কিন্তু সামনে এক...

গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রাণীরা এত রঙিন কেন?

গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের বনজঙ্গল, নদী ও সমুদ্রের পানির নিচে থাকা প্রাণীগুলোকে দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। এদের শরীরজুড়ে থাকে লাল,...