এক্স-রে যেভাবে কাজ করে

Date:

শেয়ারঃ

আমরা দৈনন্দিন জীবনে এক্সরে সাথে পরিচিত তাই এক্স-রে সম্পর্কে কিছু কথা বলার জন্য আজকের এই আপডেট।

(toc) #title=(বিষয়বস্তু সারণি)

১৮৯৫ সালে রন্টজেন পর্যবেক্ষণ করেন যে, দ্রুতগতিসম্পন্ন ইলেকট্রন কোনো ধাতুতে আঘাত করলে তা থেকে উচ্চ ভেন্দন ক্ষমতাসম্পন্ন একপ্রকার বিকিরণ উৎপন্ন হয়। এর প্রকৃতি তখন বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল অজানা। তাই বিকিরণের নাম দেওয়া হয় এক্স-রে। এ আবিষ্কারের জন্য ১৯০১ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।


এক্স-রে দু প্রকার:

(ক) কোমল এক্স-রে 

(খ) কঠিন এক্স-রে।


এক্স-রে যন্ত্রে কম বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করে যে এক্স-রে পাওয়া যায় তাকে কোমল এক্স-রে বলে। এক্স-রে যন্ত্রে প্রযুক্ত বিভব পার্থক্য বেশি হলে যে এক্স-রে উৎপাদিত হয় তাকে কঠিন এক্স-রে বলে।


বিজ্ঞানী রন্টজেন তড়িৎক্ষরণ নলে 10-3 mm পারদস্তম্ভ চাপে বায়ুর মধ্যে তড়িৎক্ষরণের পরীক্ষা করতে গিয়ে লক্ষ্য করেন যে, নল থেকে কিছু দূরে অবস্থিত বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইড দ্বারা আবৃত পর্দায় প্রতিপ্রভার সৃষ্টি হচ্ছে। পরে তিনি আবিষ্কার করেন যে, তড়িৎক্ষরণ নল থেকে ক্যাথোড রশ্মি যখন নলের দেয়ালে পড়ে তখন এ রশ্মির উৎপত্তি হয়। তিনি এ রশ্মির নাম রাখেন এক্স-রে।

দ্রুতগতিসম্পন্ন ইলেকট্রন কোনো ধাতুকে আঘাত করলে তা থেকে উচ্চ ভেদনক্ষমতাসম্পন্ন যে বিকিরণ উৎপন্ন হয়,তাকে এক্স-রে বলে।


এক্স-রে উৎপাদন

একটি ‘কুলিজ এক্স-রে টিউব’ (Coolidge X-ray tube) এর প্রয়োজনীয় অংশসমূহ দেখানো হয়েছে। ফিলামেন্ট এর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎপ্রবাহ ক্যাথোড কে উত্তপ্ত করে। ফলে ইলেকট্রনগুলো ক্যাথোড থেকে তাদের বন্ধন মুক্তির যথেষ্ট গতিশক্তি পায় এবং তাপীয় নিঃসরণ প্রক্রিয়ায় ক্যাথোড থেকে মুক্ত হয়ে আসে। তারপর একটি অতি উচ্চ বিভব পার্থক্য এর দ্বারা ইলেকট্রনগুলো ত্বরিত হয় ও অ্যানোডরূপী লক্ষ্যবস্তু তে আঘাত করে। ক্যাথোড থেকে অ্যানোডে যাবার সময় ও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার পূর্বে ইলেক্ট্রনগুলো বিপুল পরিমাণে গতিশক্তি অর্জন করে। 

এক্স-রের ধর্ম

বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এক্স-রের নিম্নোক্ত ধর্মাবলি আবিষ্কৃত হয়েছে।


  •  এ রশ্মি সরলরেখায় গমন করে।
  • এটি অত্যধিক ভেদন ক্ষমতাসম্পন্ন।
  •  এক্স-রে একটি তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ। তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বকক্ষেত্র দ্বারা এটি বিক্ষিপ্ত হয় না।
  •  এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য খুব ছোটো, প্রায় 10-10 m এর কাছাকাছি।
  • সাধারণ আলোর ন্যায় এক্স-রের প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যতিচার, অপবর্তন ও সমবর্তন হয়ে থাকে।
  • ফটোগ্রাফিক প্লেটের ওপর এর প্রতিক্রিয়া আছে।
  • কোনো ধাতবপৃষ্ঠে এ রশ্মি পতিত হলে তা থেকে ইলেকট্রন নিঃসৃত হয়। সুতরাং এ রশ্মির আলোকতড়িৎ ক্রিয়া আছে।
  •  জিঙ্ক সালফাইড, বেরিয়াম-প্লাটিনোসায়ানাইড প্রভৃতি পদার্থে এ রশ্মি প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করে।
  • এটা আয়ন সৃষ্টিকারী বিকিরণ। গ্যাসের মধ্যদিয়ে যাবার সময় এটা গ্যাসকে আয়নিত করে।
  • এটি আধান নিরপেক্ষ।

এক্স-রের ব্যবহার

এক্স-রের বিভিন্ন ব্যবহার রয়েছে। এ রশি চিকিৎসাবিজ্ঞানে, শিল্প কারখানায় ও গোয়েন্দাদের কাজে ব্যবহৃত হয়।

(ক) চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহারঃ


১। স্থানচ্যুত হাড়, হাড়ে দাগ বা ফাটল, ভেঙে যাওয়া হাড়, শরীরে বাইরের কোনো বস্তুর বা ফুসফুসের কোনো ক্ষতের ইত্যাদির অবস্থান নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।

২। ক্যানসারের চিকিৎসা ও সংক্রমণ বৃদ্ধির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

৩। পরিপাক নালি দিয়ে খাদ্যবস্তুর গমন অনুসরণ, আলসার ও দাঁতের গোড়ায় আলসার নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়।

(খ) শিল্পে ব্যবহারঃ

১। ধাতব ঢালাইয়ের দোষ-ত্রুটিপূর্ণ ওয়েল্ডিং, ধাতব পাতের গর্ত ইত্যাদি নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।

২। কেলাস গঠন পরীক্ষায় এক্স-রে ব্যবহৃত হয় এবং মনিকারেরা এর সাহায্যে আসল ও নকল গহনা শনাক্ত করতে পারেন।

৩। টফি, লজেন্স ইত্যাদির মান বজায় আছে কিনা বা টফি ও লজেন্সে ক্ষতিকর কোনো কিছু মিশ্রিত হয়েছে কি না তা জানার জন্য ব্যবহৃত হয়।

(গ) গোয়েন্দা বিভাগে ব্যবহারঃ

১। কাঠের বাক্স বা চামড়ার থলিতে বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখলে তা খুঁজে বের করতে ব্যবহার করা হয়। ২। কাস্টম কর্মকর্তারা চোরাচালানের দ্রব্যাদি খুঁজে বের করতে ব্যবহার করেন। কোনো নিষিদ্ধ পণ্য কোনো কাঠের বাক্স বা ধাতুর বাক্সে থাকলে এদের মধ্যদিয়ে এক্স-রে প্রবেশ করিয়ে তা জানা যায়।

এক্স-রে-এর একক

এক্স-রের একক রন্টজেন (roentgen)। যে পরিমাণ এক্স-রে প্রতি কিলোগ্রাম বায়ুতে 2.58 × 10-4 কুলম্ব আধান উৎপন্ন করতে পারে তাকে এক রন্টজেন (R) বলে।

আরও তথ্য

আমাদের গ্যালাক্সির ভেতর ও বাইরের জ্যোতির্বিদীয় উৎস থেকে নির্গত এক্স-রে নিয়ে যা আলোচনা করে তাই এক্স-রে জ্যোতির্বিদ্যা। এক্স-রে জ্যোতির্বিদ্যার মূলনীতি হলো বিভিন্ন জ্যোতিষ্ক থেকে এক্স-রে তরঙ্গদৈর্ঘ্যে নির্গত বিকিরণের ওপর ভিত্তি করে এটা কাজ করে। এসব বন্ধু এদের হালকা ও ভারি গ্যাস থেকে তাপীয় নিঃসরণের মাধ্যমে এক্স-রে বিকিরণ করে। এক্স-রে যেহেতু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দ্বারা শোষিত হয় 150 km এর বেশি উচ্চতায় কৃত্রিম উপগ্রহ, রকেট বা বেলুনে যন্ত্রপাতি স্থাপন করে পর্যবেক্ষণ চালাতে হয়। এক্সরে অতি উচ্চতাপমাত্রার (প্রায় 10 থেকে 106 K) গ্যাস থেকে উৎপন্ন তাপীয় বিকিরণ অথবা চৌম্বকক্ষেত্রের সাথে বা নিম্নশক্তি ফোটনের সাথে উচ্চশক্তি ইলেকট্রনের মিথস্ক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হতে পারে। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি যেমন প্রোপরশনাল কাউন্টার, চার্জড-কাপলড ডিভাইস বা গ্রেজিং ইনসিডেন্ট টেলিস্কোপ দিয়ে এক্স-রে শনাক্ত করা যেতে পারে।

গ্যালাক্সিতে সবচেয়ে সাধারণ ও উজ্জ্বল এক্স-রে উৎস হলো এক্স-রে বাইনারি যাতে স্বাভাবিক নক্ষত্র থেকে কোনো নিকটবর্তী সঙ্গী যেমন কোনো শ্বেতবামন, নিউট্রন নক্ষত্র বা এমনকি কোনো কৃষ্ণ বিবরে গ্যাস প্রবাহিত হয়। সুপারনোভার ধ্বংসাবশেষ যেমন কাঁকড়া নীহারিকা (Crab nebula) হলো অন্য একটি উৎস। ক্ষীণতর কিন্তু স্বকীয়ভাবে অত্যন্ত ক্ষমতাশালী এক্স-রে নিঃসরণ ঘটে গ্যালাক্সির বাইরের বন্ধু বিশেষ করে সক্রিয় গ্যালাক্সি যেমন সেফার্ট গ্যালাক্সি, কোয়াসার ও ক্ষমতাশালী রেডিও গ্যালাক্সি থেকে।
(full-width)

mehrab360
mehrab360https://www.mehrab360.com
হোসাইন হাওলাদার, mehrab360.com এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য, বিশ্লেষণ ও হালনাগাদ কনটেন্ট নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে। বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে জটিল প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো সহজভাবে তুলে ধরা। বিশ্বের প্রযুক্তি জগতের সর্বশেষ আপডেট, রিভিউ ও ব্যাখ্যামূলক কনটেন্ট পড়তে পারবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিজ্ঞাপনspot_img

এই সম্পর্কে আরো পড়ুন

গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রাণীরা এত রঙিন কেন?

গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের বনজঙ্গল, নদী ও সমুদ্রের পানির নিচে থাকা প্রাণীগুলোকে দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। এদের শরীরজুড়ে থাকে লাল,...

মস্তিষ্কের কোষ কোন বয়সে বাড়ে?

বিকাশিত মানুষের মস্তিষ্ক যখন গর্ভে তখন কোটি কোটি নিউরন অর্জন করে এবং শৈশবে আরও কিছু নিউরনকে কাজে লাগায়।...

Google Pay বাংলাদেশে আসছে! সুবিধা কি?

গুগল পে আগামী এক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে চালু হতে যাচ্ছে। অনেকেই এই বিষয় নিয়ে জানতে চাচ্ছে। অনেক ধরনের...

টর্নেটো যেভাবে তৈরি হয়

আমরা সকলেই টর্নেডো সম্পর্কে জানি। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি যে টর্নেডো কিভাবে সৃষ্টি হয়। বায়ুর এক ধরনের...