মৌমাছি Arthropoda পর্বের Insecta শ্রেণির Hymenoptera বর্গের Apidae গোত্রের Apis গণের। বাংলাদেশে তিন প্রজাতির মৌমাছি পাওয়া যায়-
Apis indica এরা পাহাড়ি অঞ্চলে, সমতল ভূমি, বনে-জঙ্গলে, দালান বা ঘরের সুবিধাজনক স্থানে বাসা তৈরি করে। মধু সংগ্রহের জন্য এ জাতীয় মৌমাছিই কৃত্রিম উপায়ে চাষ করা হয়। Apis dorsata এরা গাছের শাখায় বা ফোকরে, দালানের কার্নিশে বাসা তৈরি করে। তবে এরা বছরে একবার পরিযায়ী হয়ে পাহাড়ি এলাকায় চলে যায়। Apis florea এরা আকারে খুব ছোট এবং চাকটি ৬ ইঞ্চির মতো লম্বা। এরা গাছের ডালে কিংবা ঘরের কার্নিশে চাক তৈরি করে। মৌমাছির মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় রাণীই সমাজের মধ্যমণি। প্রতিটি মৌচাক একটি মাত্র রাণীর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। মৌচাকের অন্যান্য সদস্য অপেক্ষা রাণীর দেহ অপেক্ষাকৃত বড় (লম্বায় ১৫-২০ মিলিমিটার), পা মজবুত, উদর প্রলম্বিত, উদরের শেষ ভাগ ক্রমশ মরু। দেহের তুলনায় ডানাদুটি ছোট। এদের লালাগ্রন্থি থাকেনা। হুলে বার্ব না থাকায় এরা বার বার হুল ফুটাতে পারে। সঙ্গমের পর রাণী দিনে ১৫০০-২০০০ ডিম পাড়তে সক্ষম। ডিম নিষিক্তকরণ সম্পূর্ণরূপে রাণীর নিয়ন্ত্রণাধীন। কলোনির প্রয়োজন অনুযায়ী রাণী নিষিক্ত ও অনিষিক্ত ডিম পাড়ে কিংবা নতুন কলোনি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কিছু কর্মী ও পুরুষ মৌমাছিসহ অন্যত্র গমন করে।
ভবিষ্যৎ রাণীর লার্ভাগুলো তরুণ কর্মী মৌমাছির গলবিলীয় ও ম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ রাজকীয় জেলি (royal jelly) খেয়ে বড় হয়, ফলে রাণী মৌমাছিতে রূপান্তরিত হয়। এ ঘটনাকে সুপার সিডিওর (super sedure) বলে। ১৬ দিনের মধ্যে মৌমাছিরা রাণীকে পূর্ণাঙ্গ করে তোলে। নতুন রাণী বের হয়ে মৌচাকে বিকাশরত অন্যান্য রাণীদের হুল ফুটিয়ে হত্যা করে। একই সময়ে দুটি নতুন রাণী বের হলে এরা মরণযুদ্ধে (duel to the death) লিপ্ত হয়। যুদ্ধে জয়ী রাণী কলোনির সার্বিক দায়িত্বভার গ্রহণ করে।রাণী মৌমাছি অধিকাংশ সময় মৌচাকের মধ্যে অবস্থান করে। কেবল সঙ্গম উড্ডয়ন (nauptial flight)-এর সময় মৌচাক থেকে বের হয়ে আসে। এরা জীবনে একবার কয়েকশ পুরুষের সাথে সঙ্গমে অংশগ্রহণ করে অসংখ্য শুক্রাণু গ্রহণ করে যা সারাজীবন ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে। রাণী মৌমাছি ৩-৫ বছর বাঁচে। রাণী মৌমাছির প্রধান কাজ ডিম পাড়া। জীবদ্দশায় একটি রাণী মৌমাছি প্রায় দেড় লক্ষ ডিম পাড়ে। এছাড়া এটি কলোনির প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে। এর মস্তক থেকে ক্ষরিত তরল ফেরোমন (Pheromone Oxydecenoid acid) মৌচাকের বিভিন্ন সদস্যদের সংঘবদ্ধ রাখতে সাহায্য করে।