আজকের এই আপডেটে পদার্থ বিজ্ঞানের কণা নিয়ে আলোচনা করা হবে। কনা পদার্থবিজ্ঞানের একটি অন্যতম উপাদান। তাই সবাইকে জানতে হবে। ভালো লাগলে শেয়ার করে দিও।
আমরা আমাদের চারপাশে তাকালে মানুষজন, গাছপালা, দালানকোঠা, আকাশের দিকে তাকালে চাঁদ সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, মহাকাশের গভীরে তাকালে গ্যালাক্সি পর গ্যালাক্সির দেখতে পাই এবং আমরা সবাই জানি সেগুলোর সবকিছু তৈরি হয়েছে কিছু পরমাণু দিয়ে এবং সেই পরমাণুগুলো তৈরি হয়েছে ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন দিয়ে। তোমাদের নিশ্চয়ই জানার কৌতূহল হয় যে এই ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন কি সত্যিকারের মৌলিক কণা, নাকি সেগুলোও অন্যকিছু দিয়ে তৈরি হয়েছে? এই তিনটি কণা ছাড়া অন্য কোনো বস্তু কণা কি আছে? তোমরা এর মাঝে জেনে গেছ যে এই মৌলিক বস্তুকণাগুলো পরস্পরের সঙ্গে চার ধরনের বল দিয়ে ক্রিয়া-বিক্রিয়া করে যেগুলো হচ্ছে মহাকর্ষ বল, তড়িৎ চৌম্বক বা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল, দুর্বল নিউক্লিয় বল ও সবল নিউক্লিয় বল।
কিন্তু তোমরা কি জানো এই বলগুলো আসলে ক্রিয়া-বিক্রিয়া করে এক ধরনের শক্তি কণা বিনিময় করে? যার অর্থ এই ভৌতজগত তৈরি হয়েছে দুই ধরনের কণা দিয়ে, যেগুলো হচ্ছে বস্তুকণা এবং শক্তিকণা। পদার্থবিজ্ঞানের যে শাখায় বস্তুকণা এবং শক্তিকণার বিভাজন এবং ক্রিয়া-বিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয় সেটি হচ্ছে কণা পদার্থবিজ্ঞান। এই অধ্যায়ে আমরা সেই কণা পদার্থবিজ্ঞানের অসাধারণ বৈচিত্র্যময় জগতের সঙ্গে তোমাদের একটুখানি পরিচয় করিয়ে দেব, তবে সেটি সম্পর্কে সত্যিকারের ধারণা পেতে হলে তোমাদের পদার্থবিজ্ঞানের আরও অনেক গভীরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
১৯২১ সালে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়, যেখানে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। কার্জন হল থেকে ১৯২৪ সালে আইনস্টাইনকে তিনি একটি চিঠি লিখে জানান যে, ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের হিসাবে একটু গড়মিল আছে, হিসাবটা অন্যরকম হলে ভালো হতো। সেটি কেমন হওয়া উচিত তার ওপর তিনি একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। এই তরুণ বিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে অনুরোধ করেন তার প্রবন্ধটি জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে একটি জার্নালে প্রকাশ করতে। আইনস্টাইন তৎক্ষণাৎ চিঠির জবাব দিয়ে সত্যেন বসুর ইংরেজি প্রবন্ধটি জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে একটি জার্নালে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। সত্যেন বসুর সেই কাজের কারণে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অর্ধেক কণাকে তার নাম অনুসারে বোজন কণা ডাকা হয়।(alert-success)
এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তৈরি হয়েছে বস্তুকণা এবং শক্তিকণা দিয়ে, বস্তুকণাকে বলা হয় ‘ফার্মিওন’ (Fermion) এবং শক্তিকণাকে বলা হয় ‘বোজন’ (Boson)। তাই আমরা বলতে পারি এই মহাবিশ্বের যে কোনো একটি মৌলিক কণা নেয়া হলে মোটা দাগে সেটা হয় ‘ফার্মিওন’, না হয় ‘বোজন’ হবে। এই বোজন নামটা এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের একজন বাঙালি অধ্যাপক সত্যেন বসুর নাম থেকে, আর ফার্মিওন নামটা এসেছে ইতালিয়ান বিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মির নাম থেকে। মৌলিক কণা ফার্মিওন এবং বোজনের অনেক বড়ো একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
বৈশিষ্ট্যটি সহজভাবে বলতে হলে এভাবে বলা যায়ঃ হুবহু একরকম কণা হলে যখন সেগুলো একসঙ্গে থাকতে পারে না তখন বুঝতে হবে সেটি হচ্ছে ফার্মিওন। আর যখন হুবহু একরকম কণা একসঙ্গে থাকে তখন বুঝতে হবে সেটি হচ্ছে বোজন। ইলেকট্রন হচ্ছে ফার্মিওন, তাই তোমরা যখন পরমাণুর গঠন পড়েছ তখন লক্ষ করেছ একটি শক্তিস্তরে সবকটি ইলেকট্রনকে গাদাগাদি করে রাখা যায় না। ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ইলেকট্রন দিয়ে একটি শক্তিস্তর পূর্ণ হয়ে গেলেই অন্য ইলেকট্রনের জায়গা করে দেয়ার জন্য পরের শক্তিস্তরে চলে যেতে হয়। আবার আলোর কণা বা ফোটন হচ্ছে বোজন। ফোটন এক শক্তিস্তরে থাকতে পারে বলে এত তীব্র আলোর লেজার রশ্মি তৈরি করা সম্ভব হয়।(full-width)
হোসাইন হাওলাদার, mehrab360.com এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য, বিশ্লেষণ ও হালনাগাদ কনটেন্ট নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে। বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে জটিল প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো সহজভাবে তুলে ধরা। বিশ্বের প্রযুক্তি জগতের সর্বশেষ আপডেট, রিভিউ ও ব্যাখ্যামূলক কনটেন্ট পড়তে পারবেন।