পানিতে শরীর ভিজিয়ে রাখতে কার না ভালো লাগে! তোমরা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছ বেশিক্ষণ পানিতে থাকলে হাত-পায়ের ত্বক কুঁচকে যায়। কেন এমনটা হয় বলতে পার কি?
![]() |
সংগৃহীত |
তোমাদের কাছে প্রশ্ন ঃ আমরা যখন পুকুরে বা সুইমিং পুলে নামি তখন আমরা সমস্ত শরীরটাকেও ভেজাই। তাহলে পুরো শরীরের চামড়া কুঁচকানোর কথা; কিন্তু হাত-পায়ের চামড়া বেশি কুঁচকায় কেন?
প্রথমেই তোমাদের মাথায় অভিস্রবণের কথা আসবে। পানিতে হাত ভিজিয়ে রাখা অবস্থায় বাইরের পরিবেশে পানি বেশি, চামড়ার ভেতর তুলনামূলকভাবে পানি কম। ত্বককে আমরা অর্ধভেদ্য পর্দা হিসেবে ধরতে পারি।
এখন পর্যন্ত সব ঠিকঠাক। কিন্তু ত্বকের ভেতর পানি ঢুকলে ত্বক তো আরো ফুলে-ফেঁপে ঢোল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তো উল্টো ঘটে, ত্বক কুঁচকে যায়। তাহলে ত্বক কুঁচকে যাওয়ার কারণ শুধু অভিস্রবণ নয়। তবে কি কারণে এমনটা হয়? ১৯৩৫ সালে কয়েকজন ডাক্তার খেয়াল করলেন যাদের হাতের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ত্বক সাধারণ মানুষের মত কুঁচকে যাচ্ছে না। তা হলে ত্বক কুঁচকে যাওয়ার শাথে নার্ভের (নিউরনের) সম্পর্ক আছে।
আমরা ত্বকের যে স্তরটি দেখতে পাই সেটার নাম এপিডার্মিস। এর নিচে রয়েছে ডার্মিস স্তর। এই ডার্মিস স্তরেই রয়েছে তেলগ্রন্থি আর ঘামগ্রন্থি। যখন আমরা পানিতে হাত ভেজাই তখন পানি ত্বকের ছিদ্র দিয়ে তেলগ্রন্থি আর ঘামগ্রন্থি-তে প্রবেশ করে। এতে করে সেখানকার ঘনত্ব কমে যায়। ঘনত্ব যাতে বেশি কমে না যায় সে জন্য ডার্মিস স্তরে থাকা নিউরনগুলো রক্তনালীকে সংকুচিত করে ফেলে। ডার্মিসের উপরের স্তর এপিডার্মিসে কোনো নিউরন বা রক্তনালী নেই। তাই এপিডার্মিস টানটান থাকে কিন্তু ডার্মিস স্তর কুঁচকে যায়। এজন্য বাইরে থেকে দেখে ত্বক কুঁচকানো মনে হয়।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে আমরা স্নানে ভিজিয়ে রাখলে কেন মানুষের আঙুল এবং পায়ের আঙ্গুলের ত্বক পুরানো ছাঁটাইয়ের মতো কুঁচকে যায় তার উত্তর তাদের কাছে রয়েছে। ল্যাবরেটরি পরীক্ষাগুলি একটি তত্ত্ব নিশ্চিত করেছে যে কুঁচকে যাওয়া আঙ্গুলগুলি ভিজে বা নিমজ্জিত বস্তুর উপর আমাদের দখলকে উন্নত করে, গাড়ির টায়ারে বৃষ্টির মতো জলকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করে। লোকেরা প্রায়শই ধরে নেয় যে ত্বকের বাইরের স্তরে জল প্রবেশ করে এবং এটি ফুলে যাওয়ার ফলে কুঁচকানো হয়। কিন্তু গবেষকরা ১৯৩০ সাল থেকে জেনেছেন যে আঙ্গুলের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রভাবটি ঘটে না। এটি শরীরের স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের দ্বারা একটি অনিচ্ছাকৃত প্রতিক্রিয়া হিসাবে পরিবর্তনের দিকে নির্দেশ করে – যে সিস্টেমটি শ্বাস, হৃদস্পন্দন এবং ঘাম নিয়ন্ত্রণ করে। প্রকৃতপক্ষে, ত্বকের নীচে রক্তনালীগুলি সংকুচিত হওয়ার কারণে স্বতন্ত্র কুঁচকানো হয়।
২০১১ সালে, বোয়েস, আইডাহোর 2AI ল্যাবসের একজন বিবর্তনীয় নিউরোবায়োলজিস্ট মার্ক চাঙ্গিজি এবং তার সহকর্মীরা পরামর্শ দিয়েছিলেন যে কুঁচকে যাওয়া, একটি সক্রিয় প্রক্রিয়া হওয়ায় এর একটি বিবর্তনীয় কাজ থাকতে হবে। দলটি আরও দেখিয়েছে যে কুঁচকে যাওয়ার প্যাটার্নটি একটি নিষ্কাশন নেটওয়ার্ক প্রদানের জন্য অপ্টিমাইজ করা হয়েছে যা গ্রিপকে উন্নত করে। কিন্তু এখন অবধি, এমন কোন প্রমাণ ছিল না যে কুঁচকে যাওয়া আঙ্গুলগুলি আসলে একটি সুবিধা দেয়। সর্বশেষ গবেষণায়, অংশগ্রহণকারীরা ৩০ মিনিটের জন্য গরম জলে ভিজিয়ে রাখার পরে সাধারণ হাত দিয়ে বা কুঁচকানো আঙ্গুল সহ বিভিন্ন আকারের মার্বেল সহ ভেজা বা শুকনো বস্তু তুলেছিলেন। বিষয়গুলি শুকনো আঙ্গুলের তুলনায় কুঁচকানো আঙ্গুল দিয়ে ভিজা মার্বেলগুলি তুলতে দ্রুত ছিল, তবে শুষ্ক বস্তুগুলি সরানোর জন্য বলিগুলি কোনও পার্থক্য করেনি। ফলাফল আজ জীববিজ্ঞান চিঠিপত্র প্রকাশিত হয়।
“আমরা দেখিয়েছি যে কুঁচকানো আঙ্গুলগুলি ভেজা অবস্থায় আরও ভাল গ্রিপ দেয় – এটি আপনার গাড়ির টায়ারের মতো কাজ করতে পারে, যা আরও বেশি টায়ারকে রাস্তার সংস্পর্শে রাখতে দেয় এবং আপনাকে আরও ভাল গ্রিপ দেয়,” বলেছেন টম স্মল্ডার্স , যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটির একজন বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী এবং গবেষণাপত্রের একজন সহ-লেখক।