জলবিদ্যুৎ হলো প্রবাহিত পানির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রক্রিয়া। পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ অংশ পানি দ্বারা আচ্ছাদিত, এবং এই পানির প্রবাহ থেকে শক্তি আহরণ করা সম্ভব। পানির গতিশক্তি মূলত অভিকর্ষের কারণে সৃষ্টি হয়। সূর্যের তাপে পানি বাষ্প হয়ে আকাশে উঠে, তারপর ঠান্ডা হয়ে মেঘ তৈরি করে এবং বৃষ্টি হয়ে পুনরায় ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। এই পানি উঁচু অঞ্চল থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মূলত টারবাইন ব্যবহার করা হয়। প্রবাহমান পানি টারবাইনের পাখাগুলোতে ধাক্কা দেয়, যার ফলে চাকা ঘুরতে থাকে। এই চাকা একটি জেনারেটরের সাথে সংযুক্ত থাকে, যা যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করে। এটি মূলত ফ্যারাডের বিদ্যুৎচুম্বকীয় আবেশের সূত্র অনুসারে কাজ করে। ডিজেল চালিত জেনারেটরের মতোই এই প্রক্রিয়া কাজ করে, তবে এখানে জ্বালানির পরিবর্তে পানির শক্তি ব্যবহার করা হয়।
জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে। প্রথমত, চলমান নদীভিত্তিক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, যেখানে সরাসরি প্রবাহমান নদীর স্রোত ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এই ধরনের কেন্দ্র বর্ষাকালে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, তবে খরার সময় উৎপাদন কমে যায়। এটি তুলনামূলকভাবে কম খরচে স্থাপন করা যায়, তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন। দ্বিতীয়ত, বাঁধভিত্তিক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, যেখানে বিশাল বাঁধ নির্মাণ করে পানি সংরক্ষণ করা হয় এবং নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রবাহিত করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এই ধরনের কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্থিতিশীলতা বজায় রাখে, তবে কখনো কখনো নিচু এলাকায় কৃত্রিম খরা বা বন্যার ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
পানির ঢেউয়ের এই শক্তিকে মানুষের কাজে লাগানোর ইতিহাস অনেক পুরোনো। শত শত বছর ধরে মানুষ পানির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অনেক কিছুই উদ্ভাবন করেছে এবং পরিশ্রমের কাজগুলো করেছে। আধুনিক যুগে মানুষ আরো একধাপ এগিয়ে তৈরি করছে জলবিদ্যুৎ।{alertSuccess}
জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশবান্ধব, কারণ এতে কোনো কার্বন নিঃসরণ হয় না। এটি নবায়নযোগ্য শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস, যা ক্রমাগত ব্যবহার করা সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনের এই যুগে টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জলবিদ্যুৎ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।