ম্যাচ বাক্সের পাশে যে বাদামি রঙের এর অমসৃণ পৃষ্ঠ থাকে তাতে ম্যাচের কাঠি ঘর্ষণে কেন আগুন ধরে?
আমরা যে ম্যাচ ব্যবহার করি তার ২ পাশে বাদামি রঙ এবং অমসৃণ পৃষ্ঠ দেখতে পাওয়া যায় এ অমসৃণ পৃষ্ঠে ম্যাচের কাঠি ঘষলে আগুন জ্বলে উঠে।
আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি এটা কেন হয়?
এই আগুন জ্বলে উঠার পেছেন অনেক গুলো রাসায়নিক বিক্রির সংঘটিত হয়। আগুন জ্বালানোর জন্য মূলত ৩টি উপাদান প্রয়োজন হয়
১. তাপ ২. অক্সিজেন ৩. জ্বালানি
আমরা যে ম্যাচ বাক্সের ২ পাশে যে বাদামি রঙের অমসৃণ পৃষ্ঠ দেখতে পাই তা আসলে লোহিত ফসফরাসের প্রলেপ। লোহিত ফসফরাসের প্রলেপের সাথে ঘর্ষণ বৃদ্ধির জন্য কিছু সূক্ষ্ণ কাঁচের গুড়া মিশ্রিত করা হয় ফলে ম্যাচ বক্সের ২ পাশে বাদামি ফসফরাসের প্রলেপ দেখায় যা আগুন জ্বলতে সাহায্য করে।
একটি কাঠিকে যখন ফসফরাসের পৃষ্ঠে ঘষা হয় তখন কিছু তাপ উৎপন্ন হয়। এই তাপের ফলে লোহিত ফসফরাসের গঠন ভেঙ্গে ফসফরাসের অন্য রূপ শ্বেত ফসফরাসে রূপান্তরিত হয়।
শ্বেত ফসফরাস খুবই সক্রিয় একটি মৌল। বাতাসে থাকা অক্সিজেনের সাথে খুব সহজে বিক্রিয়া করে আরো তাপ উৎপন্ন করে এবং আগুনের সৃষ্টি হয়।
অপর দিকে ম্যাচের কাঠির মাথায় বেশ কিছু যৌগ থাকে, এর মধ্যে একটি হলো পটাশিয়াম ক্লোরেট ( KClO3)। শ্বেত ফসফরাসের সাথে অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন তাপে এটি ভেঙ্গে গিয়ে প্রচুর অক্সিজেন তৈরি হয় যা আগুন জ্বালানোর আরো বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করে।
KClO3 → KCl + O2
কিন্তু এ আগুন ক্ষণস্থায়ী কারণ এটি সাথে সাথে ম্যাচের কাঠিতে আগুন ধরাতে পারে না, তাই আগুনকে কিছু সময়ের জন্য ধরে রাখার জন্য আর একটি যৌগ (এন্টিমনি ট্রাই সালফাইড – Sb2S3 ) ব্যবহার করা হয়।
এটি অক্সিজেনের সাথে পুড়ে সালফার ডাই অক্সাইড তৈরি করে। ম্যাচ যে সোনালী রঙের আগুন দেখা যায় তার জন্য এই যৌগ দায়ী। এই দহনে কিছু সময় পাওয়া যায় ততক্ষণে আগুন জ্বলে উঠে।
তবে এখানেই শেষ নয়, কাঠির গায়ে মোমের প্রলেপ দেওয়া হয় যাতে করে আগুন নিয়ন্ত্রিত হারে জ্বলতে থাকে। কাঠি পোড়া শেষ হয়ে যাতে এটি কয়লার মত অনেকক্ষন জ্বলতে না পারে সেজন্য প্রস্তুতির সময় কাঠিগুলোকে অ্যামোনিয়াম ফসফেট ( NH4)3PO4 এ সিক্ত করা হয় যাতে দহনের অবশিষ্ট তাপ কমিয়ে রাখতে পারে।
এছাড়াও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কাঠিতে বিভিন্ন রকমের রঙ ব্যবহার করা হয়।