সূর্যের শক্তি উৎস কী

Date:

শেয়ারঃ

সূর্যের শক্তি উৎস হলো নিউক্লিয়ার ফিউশন, যা তার অভ্যন্তরে সংঘটিত হয়। সূর্যের কেন্দ্রস্থলে তাপমাত্রা প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং চাপ অত্যন্ত বেশি। এই চরম পরিস্থিতিতে হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো একত্রিত হয়ে হিলিয়াম পরমাণু তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ায় যে পরিমাণ ভর হারায়, তা শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের বিখ্যাত সমীকরণ এই ভর-শক্তি রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করে, যেখানে হলো শক্তি, হলো হারানো ভর, এবং হলো আলোর গতি।



সংগৃহীত



নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়ায় প্রতিটি সেকেন্ডে সূর্য প্রায় ৬০০ মিলিয়ন টন হাইড্রোজেনকে হিলিয়ামে রূপান্তরিত করে এবং ৪ মিলিয়ন টন ভর শক্তিতে পরিণত হয়। এই শক্তি প্রথমে গামা রশ্মি হিসেবে মুক্তি পায়, যা পরে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন রূপ নেয়। অবশেষে, এটি আলো ও তাপ হিসেবে পৃথিবীতে পৌঁছায়। সূর্যের শক্তি তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের বিভিন্ন রূপে নির্গত হয়, যেমন দৃশ্যমান আলো, অবলোহিত রশ্মি, এবং অতিবেগুনি রশ্মি।

সূর্যের শক্তি প্রাকৃতিক জগতে অপরিহার্য। এটি পৃথিবীর আবহাওয়া, জলবায়ু এবং জীবনধারণের জন্য মূল চালিকাশক্তি। উদ্ভিদের জন্য ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়া সূর্যের আলো ব্যবহার করেই ঘটে, যা প্রাণীদের খাদ্যের উৎস। এছাড়া সূর্যের শক্তি জীবাশ্ম জ্বালানি, বায়ু, জল, এবং সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করে।

সূর্যের অভ্যন্তরীণ গঠন এ প্রক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রধানত তিনটি স্তরে বিভক্ত: কেন্দ্রস্থল, যেখানে ফিউশন ঘটে; রেডিয়েটিভ জোন, যেখানে শক্তি ধীরে ধীরে বাইরের দিকে সঞ্চারিত হয়; এবং কনভেকটিভ জোন, যেখানে উত্তপ্ত গ্যাস চলাচলের মাধ্যমে শক্তি সূর্যের পৃষ্ঠে পৌঁছায়। পৃষ্ঠ থেকে, এই শক্তি মহাশূন্যে বিকিরিত হয়।

তবে সূর্যের শক্তি অসীম নয়। গবেষকরা অনুমান করেন যে সূর্য তার বর্তমান অবস্থায় প্রায় ৫ বিলিয়ন বছর ধরে স্থায়ী থাকবে। এর পর, এটি একটি লাল দৈত্য তারায় রূপান্তরিত হবে এবং পরে একটি সাদা বামন তারায় পরিণত হবে। যদিও সূর্যের শক্তি সীমিত, তা আমাদের গ্রহে জীবনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ।

সূর্যের শক্তি নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন হয়, যা পৃথিবীতে জীবন এবং প্রকৃতির বিভিন্ন প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য। এটি শুধুমাত্র শক্তির উৎস নয়, বরং আমাদের অস্তিত্বের একটি মূল ভিত্তি। সূর্যে প্রতি মুহূর্তে বিপুল পরিমাণ শক্তি তৈরি হচ্ছে। সে কারণেই সেখান থেকে আলো আর তাপের অকল্পনীয় ফোয়ারা ছুটছে সারাক্ষণ। ব্যাপারটা প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো কিংবা ব্রিটিশ বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনও ঠিকই সন্দেহ করেছিলেন।
mehrab360
mehrab360https://www.mehrab360.com
হোসাইন হাওলাদার, mehrab360.com এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য, বিশ্লেষণ ও হালনাগাদ কনটেন্ট নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে। বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে জটিল প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো সহজভাবে তুলে ধরা। বিশ্বের প্রযুক্তি জগতের সর্বশেষ আপডেট, রিভিউ ও ব্যাখ্যামূলক কনটেন্ট পড়তে পারবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিজ্ঞাপনspot_img

এই সম্পর্কে আরো পড়ুন

প্রথম কৃষ্ণগহ্বরের রঙিন ছবি!

রঙ একটি পছন্দনীয় জিনিস। পদার্থবিজ্ঞানে ভাষায় আলোর রঙ তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত বেশি বা কম...

চীন-রাশিয়া চাঁদে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে!

২০৩৫ সালের মধ্যে চাঁদে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের একসাথে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে চীন ও রাশিয়া। চলতি মাসের শুরুর দিকে...

কৃষ্ণগহ্বর আসলে কতটা ভয়াবহ!

কৃষ্ণগহ্বর এমন এক জায়গা যেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতটাই শক্তিশালী যে, কোনও কিছুই এমনকি আলোও পড়তে পারে না। কৃষ্ণগহ্বরের...

মহাবিশ্ব অতিক্রম করার সময় কি আলো শক্তি হারায়?

আলো হলো তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ। একটি বৈদ্যুতিক তরঙ্গ এবং একটি চৌম্বক তরঙ্গ একত্রিত হয়ে স্থান-কালের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ...