মহাবিশ্ব অতিক্রম করার সময় কি আলো শক্তি হারায়?

Date:

শেয়ারঃ

আলো হলো তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ। একটি বৈদ্যুতিক তরঙ্গ এবং একটি চৌম্বক তরঙ্গ একত্রিত হয়ে স্থান-কালের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে। আলোর কোন ভর নেই। কোনো বস্তুর ভর, হোক সে ধুলোর কণা হোক বা মহাকাশযান, মহাকাশে ভ্রমণের সর্বোচ্চ গতি সীমিত করে। কিন্তু যেহেতু আলো ভরহীন, তাই এটি শূন্যস্থানে সর্বোচ্চ গতিসীমায় পৌঁছাতে সক্ষম – প্রতি সেকেন্ড ৩ লক্ষ কিমি বা বছরে প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন মাইল (৯.৬ ট্রিলিয়ন কিমি)। মহাকাশের মধ্য দিয়ে ভ্রমণের চেয়ে দ্রুত আর কিছুই নেই। আপনার চোখ পলক ফেলতে যত সময় লাগে, আলোর একটি কণা পৃথিবীর পরিধির চারপাশে দ্বিগুণেরও বেশি ভ্রমণ করে।

মহাবিশ্ব অতিক্রম করার সময় কি আলো শক্তি হারায়? সূত্রঃ livescience.com

আলো তরঙ্গ আকারে চলাচল করে এবং এর শক্তি নির্ভর করে এর তরঙ্গের উপর। বেশি তরঙ্গ হলে বেশি শক্তি হবে। আইনস্টাইনের E = hf সূত্র অনুসারে, আলোর শক্তি E এর ফ্রিকোয়েন্সি f এর সমানুপাতিক, যেখানে h প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক। মহাবিশ্ব প্রসারিত হওয়ার কারণে দূরবর্তী গ্যালাক্সি থেকে আসা আলো রেডশিফ্টেড হয়, অর্থাৎ এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেড়ে যায় এবং ফ্রিকোয়েন্সি কমে যায়।

এই প্রক্রিয়ায় আলো শক্তি হারায়, কারণ ফ্রিকোয়েন্সি কমার সাথে সাথে E = hf অনুযায়ী শক্তিও হ্রাস পায়। আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী, মহাবিশ্বের প্রসারণের কারণে সময়ের প্রসারণ ঘটে, যা আলোর গতিকে প্রভাবিত করে। দূরের গ্যালাক্সি থেকে আসা আলো যখন আমাদের কাছে পৌঁছায়, তখন এটি বেশি সময় নেয় এবং এর ফ্রিকোয়েন্সি কমে যায় বলে মনে হয়।

আলো নিজে শক্তি হারায় না, কিন্তু মহাবিশ্বের প্রসারণের কারণে এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রসারিত হয়, ফলে এটি কম শক্তিশালী হয়ে আমাদের কাছে পৌঁছায়। শক্তির সংরক্ষণ নীতিকে লঙ্ঘন করে না, কারণ হারানো শক্তি মহাবিশ্বের প্রসারণের সাথে সম্পর্কিত। মহাবিশ্বের প্রসারণের কারণে আলো রেডশিফ্ট হয় এবং শক্তি হারালেও এটি প্রকৃতপক্ষে শক্তি হারায় না। বরং শক্তির রূপান্তর ঘটে। এই প্রক্রিয়া বুঝতে টাইম ডাইলেশন এবং কসমিক এক্সপ্যানশন ধারণা গুরুত্বপূর্ণ।

mehrab360
mehrab360https://www.mehrab360.com
হোসাইন হাওলাদার, mehrab360.com এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য, বিশ্লেষণ ও হালনাগাদ কনটেন্ট নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে। বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে জটিল প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো সহজভাবে তুলে ধরা। বিশ্বের প্রযুক্তি জগতের সর্বশেষ আপডেট, রিভিউ ও ব্যাখ্যামূলক কনটেন্ট পড়তে পারবেন। Email: info@mehrab360.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিজ্ঞাপনspot_img

এই সম্পর্কে আরো পড়ুন

প্রথম কৃষ্ণগহ্বরের রঙিন ছবি!

রঙ একটি পছন্দনীয় জিনিস। পদার্থবিজ্ঞানে ভাষায় আলোর রঙ তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত বেশি বা কম...

চীন-রাশিয়া চাঁদে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে!

২০৩৫ সালের মধ্যে চাঁদে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের একসাথে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে চীন ও রাশিয়া। চলতি মাসের শুরুর দিকে...

কৃষ্ণগহ্বর আসলে কতটা ভয়াবহ!

কৃষ্ণগহ্বর এমন এক জায়গা যেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতটাই শক্তিশালী যে, কোনও কিছুই এমনকি আলোও পড়তে পারে না। কৃষ্ণগহ্বরের...

মহাবিশ্বের কবে মৃত্যু হবে?

তাপীয় মৃত্যু (Heat Death)‌ মহাবিশ্ব চিরতরে প্রসারিত হতে থাকবে এবং সকল পদার্থ শেষ পর্যন্ত শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে, যাকে...