২০৩৫ সালের মধ্যে চাঁদে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের একসাথে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে চীন ও রাশিয়া। চলতি মাসের শুরুর দিকে রাশিয়া মহাকাশ সংস্থা এবং চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং স্বাক্ষর করেছে। এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য ভবিষ্যতে চাঁদের গবেষণা স্টেশনে শক্তি জোগান দেওয়া। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানো হবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে।
সেখানেই তৈরি হবে আন্তর্জাতিক লুনার রিসার্চ স্টেশন। এটি হবে রোবটনির্ভর গবেষণা কেন্দ্র। এই চুল্লির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। সরাসরি মানুষের গিয়ে কাজ করতে হবে না। তবে ভবিষ্যতে সেখানে মানুষের বসবাসের ব্যবস্থাও থাকবে। এই স্টেশনকে ঘিরে গড়ে উঠছে নতুন এক প্রতিযোগিতা। তবে চীন ও রাশিয়ার এই প্রকল্প দ্রুত এগোচ্ছে। ২০২১ সালে ঘোষণা দেওয়ার পর মিশর, ভেনেজুয়েলা ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ১৭টি দেশ এতে অংশ নিয়েছে।

যেহেতু চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বরফে ঢাকা অঞ্চল থাকার সম্ভাবনা আছে, তাই এই অঞ্চল নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা। ভাবতে পারেন, চাঁদে কী এমন আছে যার জন্য দেশগুলো এই প্রতিযোগিতায় নেমেছে? আসলে, চাঁদের মাটিতে আছে মূল্যবান ধাতু, অক্সিজেনে ভরা ধুলো আর হিলিয়াম-৩। ভবিষ্যতের নিউক্লিয়ার ফিউশন চুল্লির জন্য হিলিয়াম-৩ সম্ভাব্য জ্বালানি। পাশাপাশি কোয়ান্টাম কম্পিউটার, আধুনিক এআই প্রযুক্তি, মহাকাশযানের জ্বালানি ইত্যাদি শীতল রাখার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। আর পৃথিবীতে এই হিলিয়ামের পরিমাণ নিতান্ত কম। ফলে চাঁদের হিলিয়াম অত্যন্ত মূল্যবান হয়ে উঠেছে।
যদিও ১৯৬৭ সালের মহাকাশ চুক্তি অনুযায়ী কোনো দেশ চাঁদ বা অন্য গ্রহ দখল করতে পারবে না, তবু যারা চাঁদ গবেষণায় এগিয়ে থাকবে, তারা নিশ্চয়ই বাড়তি সুবিধা পাবে। সে জন্যই এত প্রতিযোগিতা। ১৯৬৯ সালে চাঁদে মানুষ পাঠানোর প্রতিযোগিতায় ছিল শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের জয় হয়েছিল। কিন্তু এবার এই দুই দেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীন ও ভারতের মতো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দী। ভারত ইতিমধ্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে নভোযান অবতরণ করিয়েছে। চাঁদে কেন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসাতে হবে? মূলত চাঁদে দীর্ঘদিন থাকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শক্তির যোগান দেওয়া। সূর্যের আলো সেখানে সবসময় থাকে না। বিশেষ করে চাঁদের গহ্বরগুলোর মধ্যে যেখানে বরফ থাকতে পারে, সেখানে আলো পৌঁছায় না।
তখন সৌর প্যানেল বা ব্যাটারির শক্তি যথেষ্ট হবে না। এ ক্ষেত্রে নিউক্লিয়ার শক্তি হতে পারে একমাত্র ভরসা। যদিও মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা আগে থেকেই কিলোপাওয়ার নামে একটি নিউক্লিয়ার প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। রুশদের এই বিষয়ে আছে পুরোনো অভিজ্ঞতা। এটি সফল হলে পৃথিবীর বাইরে প্রথম নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে এটি। এর সাহায্যে চাঁদের বরফ ঢাকা এলাকায় চলাচলকারী রোভার, যোগাযোগব্যবস্থা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও শক্তি যোগাতে পারবে। ২০৩৫ সালের মধ্যেই একটি প্রাথমিক রোবোটিক স্টেশন আর নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর বসানো হবে। এরপর ধাপে ধাপে যুক্ত হবে নতুন অংশ। নাসাও চায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চীনের আগেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মানুষ পাঠাতে। কিন্তু সময়, অর্থ আর রাজনীতির খেলায় অনেক কিছু এখনো অনিশ্চিত। ততদিনে হয়তো চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চীন ও রাশিয়ার পতাকা উড়বে! আবার হঠাৎ করে এই দুই দেশকে পেছনে ফেলে যুক্তরাষ্ট্রই আগে পৌঁছে যেতে পারে চাঁদে। যা-ই হোক না কেন, এতে লাভ মানবজাতিরই।