
দূরবর্তী দক্ষিণ ডাকোটার গভীরে, একটি পরিত্যক্ত সোনার খনির নিচে শুরু হয়েছে এক বৈপ্লবিক বৈজ্ঞানিক অভিযান। লক্ষ্য—মহাবিশ্বের অস্তিত্বের মূল রহস্য উদ্ঘাটন করা। এই প্রকল্পের নাম DUNE (Deep Underground Neutrino Experiment)। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ পদার্থবিজ্ঞান গবেষণা উদ্যোগ। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, এই গবেষণার মাধ্যমে জানা যাবে কেন আমাদের চারপাশে পদার্থ রয়েছে, কিন্তু তার বিপরীত কণাগুলো—যেমন প্রতিপদার্থ—তেমনভাবে নেই।
নিউট্রিনোঃ ক্ষুদ্র কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ
নিউট্রিনো এমন এক ধরনের উপপরমাণু কণা, যা প্রচুর পরিমাণে সৃষ্টি হয় সূর্য, মহাজাগতিক রশ্মি বা পারমাণবিক বিক্রিয়ায়। প্রতিনিয়ত কোটি কোটি নিউট্রিনো আমাদের শরীর ভেদ করে চলে যায়, অথচ আমরা তা টেরও পাই না। এই কণাগুলোর কোনো চার্জ নেই এবং ভর খুবই সামান্য। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এই নিউট্রিনোগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে এক বিস্ময়কর তথ্য—যা ব্যাখ্যা করতে পারে কেন মহাবিশ্বে শুধুমাত্র পদার্থ রয়েছে এবং প্রতিপদার্থ প্রায় নেই বললেই চলে।
দানবীয় ডিটেক্টর ও ভবিষ্যতের আশা
ডিউন প্রকল্পের অংশ হিসেবে একটি দৈত্যাকার নিউট্রিনো ডিটেক্টর তৈরি হচ্ছে। এটি ভূগর্ভস্থ বিশাল কন্টেইনারে তরল আর্গন ভর্তি করে পরিচালিত হবে। যখন কোনো নিউট্রিনো এর মধ্যে ধাক্কা খাবে, তখন তার সিগন্যাল ধরা পড়বে। এই সিগন্যাল বিশ্লেষণ করেই বিজ্ঞানীরা নিউট্রিনোর প্রকৃতি ও আচরণ বুঝতে পারবেন। প্রকল্পটি সফল হলে, শুধু মহাবিশ্বের উৎপত্তি নয়, বরং কৃষ্ণবিবর, মহাজাগতিক বিস্ফোরণ এমনকি ভবিষ্যতের শক্তি উৎপাদন সম্পর্কেও নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।
বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশা
প্রায় ১,৫০০ বিজ্ঞানী এই প্রকল্পে কাজ করছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে। এটি কেবল একটি বিজ্ঞান পরীক্ষা নয়—এটি আমাদের অস্তিত্ব, সময়, ও মহাকাশ সম্পর্কে গভীরতর প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়ার এক প্রচেষ্টা।