🌕 চাঁদের দুই পৃষ্ঠের ভিন্নতার রহস্য উদঘাটন করল নাসার গবেষণানাসার GRAIL (Gravity Recovery and Interior Laboratory) মিশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা চাঁদের নিকটবর্তী (nearside) ও দূরবর্তী (farside) পৃষ্ঠের গঠনগত পার্থক্যের কারণ খুঁজে পেয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, চাঁদের অভ্যন্তরীণ গঠন অসমান; নিকটবর্তী দিকটি দূরবর্তী দিকের তুলনায় গরম এবং ভূতাত্ত্বিকভাবে অধিক সক্রিয়।
এই পার্থক্যের মূল কারণ হিসেবে প্রাচীন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতকে দায়ী করা হয়েছে, যা চাঁদের নিকটবর্তী দিকের অভ্যন্তরে তেজস্ক্রিয়, তাপ উৎপাদনকারী উপাদান যেমন থোরিয়াম ও টাইটানিয়ামের সঞ্চয় ঘটিয়েছে। ফলে, এই অংশটি দূরবর্তী দিকের তুলনায় প্রায় ১০০-২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উত্তপ্ত। এই তাপমাত্রার পার্থক্যই চাঁদের নিকটবর্তী দিকের মসৃণ, আগ্নেয়গিরির লাভা দিয়ে গঠিত “মারিয়া” সমভূমি এবং দূরবর্তী দিকের খাঁজখন্দযুক্ত, পাহাড়ি ভূখণ্ডের সৃষ্টি করেছে।
গবেষণায় ব্যবহৃত তথ্য ২০১১-২০১২ সালে চাঁদের কক্ষপথে ঘোরাফেরা করা নাসার “এব” ও “ফ্লো” নামক দুটি মহাকাশযান থেকে সংগৃহীত হয়েছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা চাঁদের সবচেয়ে বিস্তারিত মাধ্যাকর্ষণ মানচিত্র তৈরি করেছেন, যা ভবিষ্যতে চাঁদে নেভিগেশন ও অনুসন্ধান মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই গবেষণার পদ্ধতি অন্যান্য গ্রহ ও উপগ্রহ, যেমন শনি গ্রহের উপগ্রহ এনসেলাডাস এবং বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ গ্যানিমিডের অভ্যন্তরীণ গঠন বিশ্লেষণেও প্রয়োগ করা যেতে পারে, যা মহাকাশে প্রাণের সম্ভাব্য অস্তিত্ব অনুসন্ধানে সহায়ক হতে পারে।
“চাঁদের অভ্যন্তরে (ম্যান্তলে) যে অসামঞ্জস্য ধরা পড়েছে, তা চাঁদের পৃষ্ঠের গঠনগত পার্থক্যের সঙ্গে মিলছে। যেমন—নিকটবর্তী ও দূরবর্তী পাশে ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন বছর আগের আগ্নেয়গিরির লাভা পাথরের (mare basalts) পরিমাণে যে পার্থক্য দেখা যায়, তা এর প্রমাণ। এর মানে হলো, যেসব প্রক্রিয়া অতীতে চাঁদে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়েছিল, সেগুলোর প্রভাব এখনো কাজ করছে।”
সূত্র: Reuters.com