ভেবে দেখুন এমন একটা পদার্থ যেটা স্টিলের থেকে ৩০০ গুণ এবং হীরার চাইতেও ৪০ গুণ বেশি শক্তিশালী, রূপা কিংবা তামার চাইতেও ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী, যেকোনো আকারে রূপান্তর করার মতো ফ্লেক্সিবল এবং একই সাথে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ -এই এতকিছু সম্ভব মাত্র এক পরমাণুর সমান পাতলা একটা দ্বিমাত্রিক শিট থেকে। বিজ্ঞানীরাও অবাক হয়েছিলেন এই অপ্রত্যাশিত আবিষ্কারে। তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, শুধুমাত্র পেন্সিল আর স্কচটেপ দিয়েই আপনি তৈরি করে ফেলতে পারবে এই আশ্চর্য পদার্থটি!
২০০৪ সালে আবিষ্কৃত হওয়ার পরপরই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দুনিয়ায় সম্ভাবনার এক বিশাল ঝড় তুলেছিলো এই গ্রাফিন।(alert-success)
পেন্সিলের শিষ তৈরি হয় গ্রাফাইট দিয়ে। হীরার মতো গ্রাফাইটও হলো কার্বনেরই একটা রূপ। তো এই গ্রাফাইট তৈরি হয় অসংখ্য কার্বন পরমাণু একসাথে জড়ো হয়ে। কিন্তু যদি এই অসংখ্য পরমাণুর জটলা থেকে মাত্র একটা পরমাণুর স্তর আলাদা করা সম্ভব হয় যেখানে শুধু একটা তল বরাবর শুধু দ্বিমাত্রিকভাবে পরমাণুগুলো সাজানো থাকবে তাহলে যেই খুবই খুবই চিকন, মাত্র একটি পরমাণু পরিমাণ চিকন গ্রাফাইটের লেয়ার পাওয়া যাবে, তাকে বলা হয় গ্রাফিন। কাগজ যেরকম একটা দ্বিমাত্রিক তল যার সুপুরুত্ব খুবই কম, অনেকটা সেরকম, তবে পার্থক্য হলো গ্রাফিলের এই লেয়ার কাগজের চাইতেও অনেক অনেকগুণ চিকন।
গ্রাফাইট থেকে গ্রাফিন তৈরি করা, অর্থাৎ মাত্র একটা লেয়ারকে আলাদা করা কিন্তু বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এক টুকরো গ্রাফাইটের মধ্যে গ্রাফিনের মতো অসংখ্য লেয়ার একে অন্যের সাথে লেগে থাকে। তবে এই ভিন্ন ভিন্ন লেয়ারগুলো অবশ্য খুব শক্ত কোনো রাসায়নিক বন্ধন দিয়ে না, বরং অপেক্ষাকৃত দুর্বল ভ্যান্ডারওয়ালস বল দ্বারা একে অন্যের সাথে আটকে থাকে। কিন্তু তারপরও মাত্র একটি স্তরকে আলাদা করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো বিজ্ঞানীদের। একদিন এক অভিনব বুদ্ধি মাথায় আসে তাঁদের। দামী দামী যন্ত্র যা করতে পারে নি তাই-ই করে দেখায় সামান্য স্কচটেপ। গবেষক আন্দ্রে গাইম একখানি স্কচটেপের টুকরাকে গ্রাফাইটের উপর লাগিয়ে তুলে নেন। স্কচটেপে লেগে থাকা সেই গ্রাফাইটের আন্তরকে কয়েক দফায় বারবার স্কচটেপের সাথে লাগিয়ে তুলে নেওয়া হতে থাকে।