বিজ্ঞান জগতের একটি অন্যতম আবিষ্কার হচ্ছে কৃত্রিম উপগ্রহ। আজকের এই আপডেটে কৃত্রিম উপগ্রহ নিয়ে যত খুঁটিনাটি কথা আছে তা তুলে ধরা হবে। আসলে বিজ্ঞানের কথা অনেক বড় এবং ব্যাখ্যা করতে অনেক সময় লাগে। তাই আজকের এই আপডেটটি বড় হলেও পড়তে থাকুন। সবশেষে গাণিতিক ব্যাখ্যা দেওয়া হবে। অনেক কিছু জানতে পারবেন…
![]() |
কৃত্রিম উপগ্রহ হলো এক ধরনের মহাশূন্যযান যা পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য অথবা কোনো গ্রহের চারদিকে আবর্তন করে। এ উপগ্রহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। যেমন টেলিফোন, রেডিও, টিভি সঙ্কেতকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে এ উপগ্রহ ব্যবহৃত হয়। গোয়েন্দাগিরি, গবেষণা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, মহাকাশ গবেষণা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে এর ব্যবহার রয়েছে। আমরা এখানে মহাকাশ গবেষণা তথা জ্যোতির্বিদীয় অনুসন্ধানে কৃত্রিম উপগ্রহের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা জানি যে, মহাকাশের খ-বন্ধু দ্বারা নিঃসৃত তাড়িতচৌম্বক।
বিকিরণ তাড়িতচৌম্বক বর্ণালির তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সমগ্র পাল্লা জুড়ে থাকে। এ বিকিরণ প্রধান অংশ হয় বায়ুমণ্ডল দ্বারা শোষিত বা প্রতিফলিত হয়। ফলে পৃথিবী শুধু দৃশ্যমান বিকিরণ ও রেডিও তরঙ্গের সামান্য পরিমাণ গ্রহণ করে। এ মহাশূন্য প্রোব (space probe) বা মহাশূন্য অনুসন্ধানী অপটিক্যাল ও রেডিও টেলিস্কোপ ছাড়াও মহাবিশ্ব অনুসন্ধানের জন্য ব্যবহৃত সকল রকম কৌশল অবলম্বন করে।
মহাশূন্য অনুসন্ধানের অন্যতম পদ্ধতি হলো কৃত্রিম উপগ্রহের ব্যবহার। কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওপরে গিয়ে খণ্ড বন্ধু পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান করা যায়। কৃত্রিম উপগ্রহ আসার ফলে বিশেষভাবে ডিজাইন করা টেলিস্কোপ কক্ষপথে স্থাপন করে তাড়িতচৌম্বক বর্ণালির এক্সরে ও অতিবেগুনি অঞ্চলের পর্যবেক্ষণ চালানো যায়। এ ধরনের টেলিস্কোস্পের অন্যতম হচ্ছে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ (Hubble Space Telescope, HST)। ১৯৯০ সালের এপ্রিল মাসে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এরোনেটিক্স এন্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (National Aeronutics and Space Administration, NASA) বিজ্ঞানীরা বায়ুমণ্ডলের বাইরে কৃত্রিম উপগ্রহে এ টেলিস্কোপটি স্থাপন করেন। জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানী এডউইন হাবলের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এর নামকরণ করা হয় হাবল স্পেস টেলিস্কোপ । বিশাল আকৃতির এ টেলিস্কোপে রয়েছে 2.4m এবং 0.3 m ব্যাসের দুটি দর্পণ। উৎক্ষেপণের পর একটি দর্পণে ত্রুটি ধরা পড়ে।
ত্রুটি সংশোধনের পর ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর থেকে আজ অবধি শ্বাসরুদ্ধকর সব চিত্র পাঠিয়ে চলেছে HST। এসব চিত্র বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্ব সংক্রান্ত তথ্য জানতে পারছেন যা সৃষ্টিতত্ত্বের রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। HST যুক্তরাষ্ট্রের NASA কর্তৃক উৎক্ষেপিত হলেও বিশ্বের যেকোনো স্থানের গবেষকরা এ টেলিস্কোপ থেকে প্রেরিত তথ্য ব্যবহার করতে পারেন। অতি সম্প্রতি ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি NASA হাবল টেলিস্কোপের পাঠানো পৃথিবী থেকে প্রায় ত্রিশ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের একটি গ্যালাক্সির চিত্র প্রকাশ করেছে (চিত্র: ১১.১৭)। চিত্র বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন সেখানে দু বা ততোধিক গ্যালাক্সি একীভূত হয়ে একটি নতুন গ্যালাক্সিতে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।
সম্পূর্ণভাবে সৌরশক্তি চালিত হাবল টেলিস্কোপের কর্মক্ষমতা প্রায় শেষ হওয়ার পথে। HST-এর বিকল্প হিসেবে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ।
(James Webb Space Telescope, JWST) নামে নতুন একটি আরো উন্নত প্রযুক্তি সমৃদ্ধ টেলিস্কোপ ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর মহাশূন্যে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।
ভূপৃষ্ঠ থেকে কৃত্রিম উপগ্রহের উচ্চতা সাধারণত অনেক হয়। নিচের এই উচ্চতা বের করার সূত্র দেয়া হচ্ছে।
কৃত্রিম উপগ্রহের উচ্চতাঃ
সূত্রের মাধ্যমে কৃত্রিম উপগ্রহের উচ্চতা বের করা যায়। সাধারণত ভূ-স্থির উপগ্রহের উচ্চতা পরিমাপ করলে
মানটি দাড়ায়ঃ h = 35907 km
তাহলে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৫৯০৭ কিমি দূরে কৃত্রিম উপগ্রহ স্থাপন করা হয়। আপনারা বুঝতেই পারছেন কত দূরে স্থাপন করা হয়।
প্রয়োজনীয় মানঃ
G = 6.6743×10-11 Nm²kg-2
M = 2×1024 kg
T = 24 hours (24×60×60)s
π = 3.1416 , R = 6.4×106 m
কৃত্রিম উপগ্রহের বেগঃ
অর্থাৎ ভূ স্থির উপগ্রহ কত বেগে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরে তা আমরা জানবো । খুব সহজেই এটা বের করা সম্ভব।
V= √(GM/r)
সূত্রের সাহায্যে উপগ্রহের বেগ বের করা যায়। এক্ষেত্রে h এর মান হবে ৩৫৯০৭ কিমিঃ
মানটি দাড়ায়ঃ v = 3076.60 ms-1
প্রয়োজনীয় মান আগের সূত্রে রয়েছে।
এই সূত্রগুলো আপনাদেরকে জানানোর একমাত্র কারণ হচ্ছে কৃত্রিম উপগ্রহ নিয়ে যত জিজ্ঞাসা আলোচনা হয় তার জন্য এগুলো জানা প্রয়োজন। আপনাদের মনে হতে পারে এগুলো একাডেমিক বিষয়। কিন্তু এগুলো সবার জানা প্রয়োজন। তাই এখানে তুলে ধরা হয়েছে।