যেভাবে চালকবিহীন গাড়ি চলে

Date:

শেয়ারঃ

গাড়িতে উঠলে আর কোনো ড্রাইভার ব্যতীতই গাড়ি নিজে নিজে তোমাকে গন্তব্যে পৌছে দিচ্ছে। আলাদিনের জাদুর মতো মনে হলেও, এটাই এখন বাস্তব। এমন গাড়ি বর্তমানে রাস্তায় চলছে যাকে আমরা চালকবিহীন গাড়ি বা Self- Driving Car বলি। শুধু তুমি নির্দেশ দিলেই গাড়ি নিজে থেকে রাস্তা চিনে, বিপদ এড়িয়ে, সঠিক জায়গায় চলে যেতে পারে। নেই পথ চেনার ঝামেলা, পথচারীদের জিজ্ঞেস করে করে আগানোর প্রয়োজনীয়তা।

advanced-driver-assisted-large

পুরো জিনিসটার পেছনে কারিগর কিন্তু আমাদের সবার পরিচিত এআই। তো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে সম্ভব করছে এই Autonomous Driving? একটা গাড়ি চালানোর সময় একজন চালক যা যা করে থাকেন, এআই তার সবই করে, বরং আরো নিখুঁত ভাবে করে। গাড়ি চালাতে হলে ড্রাইভারকে পথ চিনতে হয়, মাঝেমধ্যে Google Map দেখে কোন রাস্তা দিয়ে গেলে জ্যাম কম পড়বে তা বাছাই করতে হয়। আশেপাশে খেয়াল রাখতে হয়। নিজের গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, নইলে সামনের স্পিডব্রেকারে গাড়ি উড়াল দিতে পারে! এআই এখানের সবই করে থাকে।

তাহলে আমাদের চালকবিহীন গাড়িটা কীভাবে রাস্তা দেখতে পায় বা সিদ্ধান্ত নেয়?

ক্যামেরা গাড়ির চারপাশে ক্যামেরা লাগানো থাকে, যা দিয়ে রাস্তার চারদিকের ছবি তোলে। এরপর পরিচিত কিছু ছবির সাথে এই ছবিকে তুলনা করে। এবং বুঝতে পারে এটা ট্রাক, মানুষ নাকি ঘোড়ার গাড়ি! এক ছবির সাথে আরেক ছবি তুলনা করার বিষয়টা বেশ মজার! YOLO পদ্ধতিতে এক ছবির সাথে অন্য ছবির তুলনা করার সময় প্রথমে ছবিকে অসংখ্য ব্লকে ভাগ করা হয়।

এরপর এক ছবির একটা ছোট্ট ব্লকের সরলরেখা বা বক্ররেখার সাথে অন্য ছবির ব্লকের তুলনা করা হয়। এভাবে যথেষ্ট সংখ্যক ব্লকের সাদৃশ্য খুঁজে পেলে, গাড়িটা বস্তুটির পরিচয় জানতে পারে! LIDAR (Light Detection and Ranging) পদ্ধতি ব্যবহার করে গাড়ি নিজের চারপাশে লেজার লাইট পাঠায়। ঐ লেজার কোনো গাড়িতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আবার ফিরে আসো এই ফিরে আসার প্রয়োজনীয় সময় হিসেব করে গাড়ি বুঝতে পারে সামনের গাড়িটা তার কত দূরে আছে।

এভাবে লেজার রশ্মি ব্যবহার করে, গাড়ির চারপাশের পরিবেশের একটি ত্রিমাত্রিক (3D) ছবি তৈরি করে নেয়। রাডার রাডার প্রযুক্তি ব্যবহার করেও গাড়ি আরো নিখুঁতভাবে আশেপাশের অন্যান্য যানবাহন, রাস্তা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। এসব ছাড়াও অন্যান্য বহু সেন্সর ব্যবহার করে গাড়ি নিজের বাস্তবিক অবস্থান বুঝতে পারে। আশেপাশের গাড়ির গতি পরিমাপ করে ৩-৪ সেকেন্ড পর কোন গাড়ি কোথায় থাকবে, তা অনুমান করে। এবং এসবের উপর নির্ভর করে নির্বিঘ্নে এগিয়ে যায়।

আরো জানুনঃ পানামা খাল কেন তৈরি করা হয়েছিল?

কিন্তু ঠিকানা চিনবে কী করে?

ধরুন আপনি, অফিস থেকে বাসায় ফিরছেন। ড্রাইভারবিহীন গাড়িতে উঠে বাসায় যেতে চাইলে। এবার- প্রথমে গাড়িটি GPS সিস্টেম ব্যবহার করে নিজের অবস্থান বুঝে নেয়। এরপর ম্যাপ ব্যবহার করে গন্তব্যে যাওয়ার সবাচায় সেরা রাস্তাটা বাছাই করে। আশপাশের প্লট্র্যাফিক, গাড়ি, এবং সিগন্যাল চেক কার। এরপর এটি সাবধানে চলা শুরু করে। যদি সামনে কোনো বিপদ থাকে, এটি নিজে থেকেই থেমে যায় বা সরে যায় এবং বিকল্প রাস্তা খুঁজতে থাকে।

গাড়ির ভেতর যখন প্রতি সেকেন্ডে কায়ক লক্ষ হিসেব নিকেশ চলতে থাকে সেসময় তুমি গাড়িতে বাস আরাম কার বই পড়তে পারো, বা জ্যাম উপভোগ করতে পারো, নিশ্চিন্তু মান ঘুম ও দিতে পারো, গাড়ি কিন্তু ঠিকই আপনাকে নিরাপদে বাসার পৌঁছে দিবে। আমাদের দেশে বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার মানুষ মারা যায়। এসব মৃত্যুর মূল কারণ চালকের অসাবধানতা এবং অনিয়ন্ত্রিত গতি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন গাড়ির ক্ষেত্রে এই অসাবধানতার সম্ভাবনা প্রায় ১০। শূন্যের কাছাকাছি।

ফলে পথচারী এবং যাত্রীর উভয়ের জীবনেরই নিশ্চয়তা বাড়বে। ড্রাইভারবিহীন গাড়িগুলো নিজেরা সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে, যানজটের হারও অনেক কমে আসবে। তবে এখনও এই প্রযুক্তি পুরোপুরি পারফেক্ট না। অনেক জায়গার রাস্তা ড্রাইভারবিহীন গাড়ির জন্য উপযুক্ত নয়। Al সবসময় মানুষের মতো জটিল পরিস্থিতি সামলাতে পারে না, কারণ এটি এখনো শিখছে। যত শিখবে তত নিখুঁত হবে। এছাড়া ড্রাইভারবিহীন গাড়ি সাধারণত বেশ ব্যয়বহুল। আবার এগুলো বিদ্যুতে চলে; আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত যথেষ্ট সংখ্যক বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশন নেই।

ইলন মাস্ককে তো আমরা অনেকেই চিনি। তিনি কেবল SpaceX অথবা টুইটারেরই(বর্তমান এক্স) মালিক নন, তার Tesla নামে গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠানও আছে। যেটা বর্তমানে Auto-Driving গাড়ি তৈরিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্রমাগত এই প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। মানুষের কাছে সহজলভ্য করার জন্য কাজ করছে। এবং হয়তো খুব শিগগিরই চালকবিহীন গাড়ি আমাদের জীবনের অংশ হয়ে যাবে।

তখন পরিবারের গাড়িটিও ড্রাইভারবিহীন হতে পারে। শুধু গাড়িকে বললেই হবে,- “আমাকে কুয়াকাটা নিয়ে চলো,” আর গাড়ি নিজে থেকেই চলা শুরু করবে। এই গাড়ি শুধু আমাদের সময় বাঁচাবে না, বরং জীবনকে আরও সহজ আর নিরাপদ করে তুলবে। এআই বর্তমানে কেবল চালকবিহীন গাড়ি নয়, ChatGPT সহ বিভিন্ন রূপে আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এর আরও উন্নয়ন দরকার। অনেকেই হয়ত এআই প্রযুক্তিতে যুগান্তকারী কিছু সাফল্য নিয়ে আসবে।

mehrab360
mehrab360https://www.mehrab360.com
হোসাইন হাওলাদার, mehrab360.com এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য, বিশ্লেষণ ও হালনাগাদ কনটেন্ট নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে। বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে জটিল প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো সহজভাবে তুলে ধরা। বিশ্বের প্রযুক্তি জগতের সর্বশেষ আপডেট, রিভিউ ও ব্যাখ্যামূলক কনটেন্ট পড়তে পারবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিজ্ঞাপনspot_img

এই সম্পর্কে আরো পড়ুন

১৮ সেকেন্ডে পূর্ণ চার্জ হবে ইভি ব্যাটারি

একটি ব্রিটিশ কোম্পানি অতি-উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইলেকট্রিক যানবাহন (ইভি) ব্যাটারির উৎপাদনের জন্য অনুমোদন পেয়েছে, যা মাত্র ১৮ সেকেন্ডে পূর্ণ...

Xiaomi 15S Pro – যে সুবিধা পাওয়া যাবে

📱 Xiaomi 15S Pro - ফোন সম্পর্কে যারা জানতে চাচ্ছেন তাঁরা নির্বিঘ্নে পড়তে পারেন। এই ফোনের যা যা রয়েছে...

ফ্রিজের ভেতরের আলো কি সবসময় জ্বলে?

ফ্রীজের ভেতরের বাতিটা কি সবসময়ই জ্বলে—এই প্রশ্নটা আমাদের কৌতূহল সৃষ্টি করে, কারণ আমরা কখনোই ফ্রীজের দরজাটা বন্ধ অবস্থায়...

অবশেষে স্টারলিংক চালু হলো বাংলাদেশে

অবশেষে বাংলাদেশ স্টারলিংকের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এখন থেকে...