ফ্রীজের ভেতরের বাতিটা কি সবসময়ই জ্বলে—এই প্রশ্নটা আমাদের কৌতূহল সৃষ্টি করে, কারণ আমরা কখনোই ফ্রীজের দরজাটা বন্ধ অবস্থায় তার ভেতরের অবস্থা দেখতে পারি না। অনেকেই ভাবেন, দরজা বন্ধ থাকলেও হয়তো বাতি জ্বলে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, ফ্রীজের ডিজাইন এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে দরজা বন্ধ করলেই বাতি নিভে যায়। ফ্রীজের ভেতরের বাতি সাধারণত একটি ছোট বাল্ব হয়ে থাকে, যা ফ্রীজের দরজার উপরের দিকে লাগানো থাকে। এই বাল্বটা চালু থাকে যতক্ষণ ফ্রীজের দরজা খোলা থাকে। দরজা বন্ধ হলেই বাল্ব নিভে যায়। এই প্রক্রিয়াটি একটি দরজা সুইচের মাধ্যমে হয়। এই সুইচটি সাধারণত দরজার পাশেই থাকে এবং দরজা বন্ধ হলে বাল্বের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এই ব্যবস্থা মূলত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য এবং অতিরিক্ত তাপ উৎপাদন রোধ করার জন্য করা হয়। কারণ ফ্রীজের ভিতরে উষ্ণতা সৃষ্টি হলে সেটাকে ঠাণ্ডা রাখার জন্য ফ্রীজকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়।

Table of Contents
বাতি যদি বন্ধ না হয়, অর্থাৎ ফ্রীজের দরজা বন্ধ থাকার পরও যদি বাতি জ্বলে, তাহলে সেটি দুটি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। প্রথমত, ফ্রীজের অভ্যন্তরে অতিরিক্ত তাপ তৈরি হবে, যার ফলে কুলিং সিস্টেমের উপর বাড়তি চাপ পড়বে। দ্বিতীয়ত, এটা বিদ্যুতের অপচয় ঘটাবে। তাই ফ্রীজ নির্মাতারা এই ব্যাপারটি মাথায় রেখে একটি নিরাপদ এবং কার্যকর সুইচিং সিস্টেম সংযোজন করে থাকেন। এই সুইচটিকে বলা হয় “ডোর সুইচ” বা “লাইট সুইচ”। এটা একটি মেকানিক্যাল সুইচ, যা তখনই সক্রিয় হয় যখন দরজা বন্ধ হয়। অর্থাৎ, দরজা বন্ধ করার সাথে সাথে সুইচটি প্রেস হয় এবং সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। আবার দরজা খোলার সাথে সাথেই সুইচটি রিলিজ হয় এবং বাতি জ্বলে ওঠে। যদি আপনি একবার পরীক্ষা করতে চান বাতি সত্যিই নিভে কি না, তবে একটি সহজ পরীক্ষা করতে পারেন—ফোন বা ক্যামেরা দিয়ে রেকর্ড মোডে রেখে ফ্রীজের দরজা বন্ধ করে আবার খুলে দেখুন। ভিডিওর মাধ্যমে আপনি দেখতে পারবেন দরজা বন্ধের সাথে সাথে বাতি নিভছে কি না।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, ফ্রীজের অভ্যন্তরীণ বাতির কার্যপদ্ধতি একটি সাধারন সার্কিট থিওরির ওপর ভিত্তি করে। একটি সুইচ এবং একটি বাল্বকে সিরিজ সংযোগে বসালে, সুইচ বন্ধ হলে বাল্বে বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং বাল্ব নিভে যায়। সুইচ চালু হলে আবার বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় এবং বাল্ব জ্বলে। ফ্রীজের ভেতরের বাতির ক্ষেত্রেও ঠিক এই নিয়মই কার্যকর হয়। এটি খুবই মৌলিক বৈদ্যুতিক যুক্তি হলেও এর ব্যবহারিক প্রয়োগ বেশ কার্যকর। বাজারে এখন অনেক ধরনের স্মার্ট ফ্রীজ পাওয়া যায় যেগুলোর ভেতরে LED লাইট থাকে এবং সুইচ ছাড়াও সেন্সর বা মাইক্রোকন্ট্রোলারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু তাও মূলনীতি একই—দরজা খোলা থাকলে আলো জ্বলে, দরজা বন্ধ হলে আলো নিভে যায়। এটি এমন এক সিস্টেম যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে এবং ব্যবহারকারীর জন্য নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করে।
আরেকটি বিষয় হলো, যদি কখনো ফ্রীজের দরজা কিছুটা খোলা থেকে যায়, তবে বাতি জ্বলে থাকতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, খাবার বা কোন প্যাকেটের কারণে দরজাটি পুরোপুরি বন্ধ হয় না। তখন আলো বন্ধ না হয়ে জ্বলে থাকে এবং ফ্রীজের অভ্যন্তরেও তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এতে খাবার নষ্ট হতে পারে। তাই নিয়মিত চেক করে নেওয়া জরুরি যে দরজাটি ঠিকভাবে বন্ধ হয়েছে কি না। তবে একটা মজার কথা হলো—এই প্রশ্নটা অনেকটা “রেফ্রিজারেটরের পেছনে কি আলো থাকে?” এর মতো। এটা শুধুই কৌতূহল নয়, বরং যুক্তিবোধেরও বিষয়। কারণ আমরা নিজের চোখে কখনোই দরজা বন্ধ অবস্থায় ফ্রীজের ভেতরের অবস্থা দেখতে পারি না, তাই এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হয় বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির সাহায্যে। এবং প্রযুক্তি আমাদের বলে—না, ফ্রীজের দরজা বন্ধ থাকলে বাতি জ্বলে না।