পেপ্যাল বাংলাদেশ কবে আসবে? সুবিধা কি কি
© Mehrab360
{fullWidth}
© Mehrab360
বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সার, অনলাইন উদ্যোক্তা এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনে সম্পৃক্ত সাধারণ মানুষের বহুদিনের এক কাক্সিক্ষত প্রশ্ন হলো—"পেপ্যাল কবে বাংলাদেশে আসবে?" বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে পেপ্যাল বহু দেশের অর্থনৈতিক লেনদেনকে সহজ করে তুলেছে। অথচ এখনও বাংলাদেশ এই গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মটির পুরো সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যদিও কয়েক বছর আগে পেপ্যালের একটি সীমিত সংস্করণ 'এক্স-প্রেস পেমেন্ট' হিসেবে চালু করা হয়েছিল, তা বাস্তবে পূর্ণাঙ্গ পেপ্যাল সেবার সমতুল্য ছিল না। এই ব্লগপোস্টে আমরা আলোচনা করবো—পেপ্যাল বাংলাদেশে কবে নাগাদ আসতে পারে, এর আগমন কিভাবে আমাদের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে, এবং ব্যবহারকারীরা কি ধরনের সুবিধা পেতে পারে।
পেপ্যাল একটি বিশ্ববিখ্যাত অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম, যা ইলন মাস্কসহ কয়েকজন উদ্যোক্তার মাধ্যমে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি মূলত ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে নিরাপদ আর দ্রুত অর্থ লেনদেনের একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে এটি বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশে সেবা দিচ্ছে এবং ৩০০ মিলিয়নের বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং, ই-কমার্স, অনলাইন শপিং, এবং পার্সোনাল মানি ট্রান্সফারের জন্য পেপ্যাল অন্যতম নির্ভরযোগ্য মাধ্যম।
বাংলাদেশে পেপ্যালের বর্তমান অবস্থা
২০১৭ সালে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে বাংলাদেশে 'এক্স-প্রেস পেমেন্ট' নামে একটি সীমিত সেবা চালু হয়, যেটি মূলত পেপ্যালের একটি পার্টনার প্রতিষ্ঠান Xoom এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তবে এই সেবাটি শুধু প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল, অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে কেউ পেমেন্ট পাঠাতে বা পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট খুলে আন্তর্জাতিক লেনদেন করতে পারত না। এটি পূর্ণাঙ্গ পেপ্যালের সুবিধা ছিল না এবং অনেকেই এই সেবায় হতাশ হন। ফলে এখন পর্যন্ত পেপ্যালের পূর্ণাঙ্গ সেবা বাংলাদেশে চালু হয়নি, যা আমাদের ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।
পেপ্যাল বাংলাদেশে কবে আসবে?
সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার পেপ্যালের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ২০২৩ সালের শেষভাগে ও ২০২৪ সালের শুরুতে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, সরকার পেপ্যালকে বাংলাদেশে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং কয়েকটি বৈঠক ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ পেপ্যাল সেবা চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। মে মাসের মধ্যেই চালু হতে পারে। ফলে এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যায় না ঠিক কবে পেপ্যাল বাংলাদেশে চালু হবে, তবে এটা বলা যায় যে সরকার এ বিষয়ে আগ্রহী এবং উদ্যোগও নিচ্ছে।
পেপ্যাল এলে কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে?
পেপ্যাল চালু হলে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতি এক বিশাল সুবিধা পাবে। বিশেষ করে নিচের সুবিধাগুলো উল্লেখযোগ্যঃ
১. ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বড় সুবিধাঃ বর্তমানে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা ফান্ড সংগ্রহ করতে Payoneer, Skrill কিংবা অন্যান্য পদ্ধতির উপর নির্ভর করে, যা সময়সাপেক্ষ এবং অতিরিক্ত চার্জযুক্ত। পেপ্যাল চালু হলে তারা সহজেই আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টের কাছ থেকে পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারবে এবং অর্থ উত্তোলনও করতে পারবে দ্রুত ও নিরাপদভাবে।
২. ই-কমার্স খাতে বিস্তৃতিঃ পেপ্যাল ব্যবহার করলে আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের কাছে পণ্য বা সেবা বিক্রি করা অনেক সহজ হবে। Shopify, WooCommerce, Etsy কিংবা Amazon এ বিক্রির জন্য পেপ্যাল একটি আন্তর্জাতিক মানের পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে কাজ করবে। এতে বাংলাদেশের ই-কমার্স উদ্যোক্তারা বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।
৩. ফ্রড প্রতিরোধ এবং নিরাপদ লেনদেনঃ পেপ্যাল একটি Buyer ও Seller Protection Policy অনুসরণ করে, যা অর্থ লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। পেমেন্ট নিয়ে প্রতারণা বা ঝুঁকির সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে।
৪. ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষকদের সুবিধাঃ অনলাইন কোর্স কিনতে, আন্তর্জাতিক জার্নাল সাবস্ক্রিপশনে অর্থ পরিশোধ করতে এবং বিভিন্ন সফটওয়্যার বা সেবা সাবস্ক্রাইব করতে পেপ্যাল দারুণভাবে সাহায্য করবে।
৫. পার্সোনাল মানি ট্রান্সফার সহজ হবেঃ প্রবাসে থাকা আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা পাঠানো সহজ হবে। বর্তমানে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন বা ব্যাংক মাধ্যমে যেসব জটিলতা হয়, পেপ্যাল তা অনেক সহজ করে দেবে।
৬. স্টার্টআপ ও প্রযুক্তি খাতে বুমঃ ফিনটেক, আইটি এবং সফটওয়্যার সার্ভিস প্রোভাইডাররা আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে পেমেন্ট গ্রহণে বাধামুক্ত হতে পারবে। এতে বিদেশি বিনিয়োগও বাড়তে পারে।
পেপ্যাল আসলে বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ কীভাবে?
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সিং দেশ। অথচ এখানকার ফ্রিল্যান্সারদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পেমেন্ট গ্রহণ। পেপ্যাল চালু হলে শুধু এই সমস্যা দূর হবে না, বরং ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। একইসাথে পেপ্যাল আসা মানে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অনলাইন লেনদেনের মূল স্রোতে সম্পৃক্ত করা। এ দেশকে ‘গ্লোবাল ডিজিটাল ইকোনমি’র সঙ্গে যুক্ত করার পথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ক্যাটাগরি
প্রযুক্তি